আমাদের সমাজে প্রায় বেশিরভাগ মানুষেরই ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। অথচ তারা দিব্বি গাড়ি চালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আবার কেও কেও ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে চাচ্ছেন কিন্তু ভিবিন্ন দালালের ভয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে পারছেন না। কেননা তারা ওত পেতে থাকে কখন নতুন কেউ ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে আসবে তাকে উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে মোটা অঙ্গকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় তাদের কাজ। তবে আজ আমরা এই আর্টিকেলে দালাল ছাড়া আপনি নিজে অফিসিয়াল ভাবে কি করে প্রফেশোনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে পারেন চলুন জেনে নেই।
ড্রাইভিং লাইসেন্সের পূর্বশর্ত হলো লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স। আবেদনকারীকে ন্যূনতম ৮ম শ্রেণি পাস হতে হবে। অপেশাদারের জন্য ন্যূনতম ১৮ বছর এবং পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ন্যূনতম ২১ বছর হতে হবে। এছাড়া মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে। কোন প্রকারের মাদক সেবনকারী বা কোন প্রকার নেশায় আসক্ত ব্যক্তি ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- ১) নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে।
- ২) রেজিস্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট। একটি ইউরিন টেস্টের প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
- ৩) ন্যাশনাল আইডি কার্ডের সত্যায়িত ফটোকপি।
- ৪) নির্ধারিত ফি (পেশাদার-এবং অপেশাদার এর ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম হতে পারে। বিআরটিএ’র নির্ধারিত ব্যাংকে জমাদানের রশিদ।
- ৫) পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পুলিশি তদন্ত প্রতিবেদন।
- ৬) সদ্য তোলা ১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির প্রক্রিয়া
ড্রাইভিং লাইসেন্সের পূর্বশর্ত হলো লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স।
গ্রাহককে প্রথমে লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন করতে হবে। গ্রাহককে তার স্থায়ী ঠিকানা বা বর্তমান ঠিকানা (প্রয়োজনীয় প্রমাণাদিসহ) বিআরটিএ’র যে সার্কেলের আওতাভূক্ত তাকে সেই সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে। সার্কেল অফিস কর্তৃপক্ষ তাকে একটি শিক্ষানবিস বা লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করবে যা দিয়ে আবেদনকারী ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারবে। ২/৩ মাস প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর তাকে নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে নির্ধারিত কেন্দ্রে লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্ট-এ অংশ গ্রহণ করতে হবে। এসময় প্রার্থীকে তার লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স (মূল কপি) ও লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য কলম সাথে আনতে হবে। পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য বয়স ন্যূনতম ২০ বছর এবং অপেশাদার এর জন্য ন্যূনতম ১৮ বছর হতে হবে।ভ ড্রাইভিং লাইসেন্সের পূর্বশর্ত হলো লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স।
লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
- ১। নির্ধারিত ফরমে আবেদন।
- ২। রেজিষ্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট।
- ৩। ন্যাশনাল আইডি কার্ড / জন্ম সনদ/পাসপোর্ট এর সত্যায়িত ফটোকপি।
- ৪। নির্ধারিত ফী, ১ ক্যাটাগরি-৩৪৫/-টাকা ও ২ ক্যাটাগরি-৫১৮/-টাকা বিআরটিএ’র নির্ধারিত ব্যাংকে জমাদানের রশিদ।
- ৫। সদ্য তোলা ০৩ কপি স্ট্যাম্প ও ০১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর পুনরায় একটি নির্ধারিত ফরমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফী প্রদান করে স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য সংশিস্নষ্ট সার্কেল অফিসে আবেদন করতে হবে। গ্রাহকের বায়োমেট্রিক্স (ডিজিটাল ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙ্গুলের ছাপ) গ্রহণপূর্বক স্মার্ট কার্ড ইস্যু করা হয়। স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রন্টিং সম্পন্ন হলে গ্রাহককে এসএমএস এর মাধ্যমে তা গ্রহণের বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হয়।
ড্রাইভিং লাইসেন্স (পেশাদার এবং অপেশাদার) ইস্যু ও নবায়নের ধাপসমূহ:
- ধাপ-১: অনলাইনে আবেদন দাখিল
ক) জাতীয় পরিচয়পত্র NID
খ) ছবি, মেডিকেল সার্টিফিকেট, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র।
গ) নির্ধারিত ফি জমা
ঘ) লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স অনলাইন প্রিন্ট হয়।
- ধাপ-২: পরীক্ষা কেন্দ্রে (DCTB) উপস্থিতি।
ক) ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে পরীক্ষার্থী যাচাইকরণ ও বায়োমেট্রিক গ্রহণ।
খ) লিখিত পরীক্ষা
গ) মৌখিক পরীক্ষা
ঘ) ব্যবহারিক পরীক্ষা
- ধাপ-৩: অনলাইনে নির্ধারিত ফি জমা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল।
- ধাপ-৪: অনলাইনে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ক্রমানুযায়ী (FIFO) যাচাই-বাছাই ও অনুমোদন।
- ধাপ-৫: ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্ট গ্রাহক নিজেই ই-পেপার ড্রাইভিং লাইসেন্স অনলাইনের মাধ্যমে প্রিন্ট করতে পারবে।
- ধাপ-৬: স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান পোস্ট অফিস কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে গ্রাহকের দোরগোড়ায় ০৭ দিনের মধ্যে প্রেরণ।
অনলাইনে (বিআরটিএ সার্ভিস পোর্টাল) এর মাধ্যমে আবেদনের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সমূহ:
- ১। রেজিষ্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট (সর্বোচ্চ ৬০০ কে.বি)। মেডিক্যাল সার্টিফিকেটের ফর্মের জন্য www.brta.gov.bd ওয়েবসাইট DOWNLOAD FORMS থেকে সংগ্রহ করা যাবে;
- ২। জাতীয় পরিচয়পত্রের স্ক্যান কপি (সর্বোচ্চ ৬০০ কে.বি)
- ৩। ইউটিলিটি বিলের স্ক্যান কপি (সর্বোচ্চ ৬০০ কে.বি) আবেদনকারীর বর্তমান ঠিকানা এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা যদি ভিন্ন হয়। তবে বর্তমান ঠিকানার ইউটিলিটি বিল সংযুক্ত করতে হবে।
- ৪। শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদের স্ক্যান কপি (সর্বোচ্চ ৬০০ কে.বি)
ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি এর তালিকা
ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু
অপেশাদার -১০ বছর- ৩০০×১০=৩০০০৳
আবেদন ফি – ৩০০৳
কার্ড ফি – ৬১০৳
মোট – ৩৯১০৳
১৫% ভ্যাট – ৫৮৭৳
সর্বমোট – ৪,৪৯৭৳
পেশাদার ০৫ বছর -৩০০×৫= ১৫০০৳
আবেদন ফি – ৩০০৳
কার্ড ফি – ৬১০৳
মোট – ২৪১০৳
১৫% ভ্যাট – ৩৬২৳
সর্বমোট – ২,৭৭২৳
ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন ফি
অপেশাদার – ১০ বছর-৩০০×১০=৩০০০৳
কার্ড ফি – ৬১০৳
মোট -৩৬১০৳
১৫% ভ্যাট – ৫৪২৳
সর্বমোট – ৪,১৫২৳
পেশাদার ০৫ বছর ৩০০×৫=১৫০০৳
কার্ড ফি – ৬১০৳
মোট – ২১১০৳
১৫% ভ্যাট – ৩১৭৳
সর্বমোট – ২,৪২৭৳
শেষ কথা
প্রিয় ভিজিটরস, এতক্ষণ সময় ধরে আমরা পেশাদার অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট এবং ফ্রী সমূহ নিয়ে বিস্তারিত জেনেছি। আমরা যারা ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য ঘুরছি কিন্তু সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণে ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে পারছে না এই পোস্টটি তাদের উপকারে আসবে আশা করছি। আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন এবং আমাদের সাথেই থাকবেন, ধন্যবাদ।