গোসল ফরজ হয় কখন -ফরজ গোসল না করলে কি ক্ষতি হয় গোসলের নিয়ম কানুন সহ জানুন

গোসল ফরজ হয় কখন ? ফরজ গোসল না করলে কি ক্ষতি হয় এবং গোসলের নিয়ম-কানুনসহ জানতে চান ? তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য । আজ এই পোস্টে আমি ফরজ গোসল কখন হয় ফরয গোসল না করলে কি কি ক্ষতি হয় এবং গোসলের নিয়ম-কানুন সহ বিস্তারিত আলোচনা করব। আপনারা যারা ফরজ গোসল না করলে কি ক্ষতি হয় তা ভালোভাবে জানতে চান তাহলে অবশ্যই পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

 

একজন ব্যক্তি দুটি জিনিস দ্বারা নাপাক হয়ে যায়। একটি হচ্ছে যৌন মিলন এবং বীর্য নির্গত হওয়া। সেটা যে কোন অবস্থায় হতে পারে, ঘুমন্ত বা জাগ্রত দুই অবস্থায় বের হয় । এটা অল্প বা বেশি এবং ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক বীর্যপাত হলে গোসল আপনার জন্য ফরজ হয়ে যায়। এখানে প্রশ্ন হল ফরজ গোসল না করলে কি কোন ক্ষতি হয় ? তাহলে চলুন নিয়েছে জেনে নেওয়া যাক ফরজ গোসল না করলে ক্ষতি হয় কি না ।

গোসল ফরজ হয় কখন

গোসল দুই অবস্থায় ফরজ হয় । একটি হচ্ছে  স্বামী স্ত্রী মিলন এ লিপ্ত হলে এবং অপরটি ঘুমের মধ্যে স্বপ্নদোষে বীর্য নির্গত হলে বা ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক বীর্যপাত হলে গোসল আপনার জন্য ফরজ হয়ে যায়। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।

ফরজ গোসল কয় প্রকার

যেসব কারণে নাপাক হলে আপনার জন্য গোসল ফরজ হয়ে যায় তার কিছু প্রকার আছে।ফরজ গোসল ছয় প্রকার। এই ছয় কারণে কোনভাবে যদি আপনি নাপাক হয়ে যান তাহলে অবশ্যই আপনাকে খুব তাড়াতাড়ি ফরজ গোসল সেরে নিতে হবে ।
প্রকার গুলো দেখে নিনঃ
  • স্বামী স্ত্রী মিলন/সহবাস এর পর অপবিত্র হলে গোসল ফরজ হয়।
  • ঘুমের মধ্যে স্বপ্নদোষ হলে গোসল ফরজ হয়।
  • নারীদের ঋতুস্রাব অথবা পিরিয়ড হলে গোসল ফরজ হয়।
  • মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়ার পর গোসল ফরজ হয়।
  • কোন অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করলে গোসল করা যায়।
  • সন্তান প্রসবের পর রক্তপাত বন্ধ হলে গোসল করা হয়।

গোসলের সুন্নাত ৬ টি

  • গোসলের শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া।
  • পবিত্রতা অর্জনের নিয়ত করা।
  • দুই হাতের কব্জি সহ ওযুর মত ধৌত করা।
  • কাপর অথবা শরীরের কোথাও নাপাকি লেগে থাকলে সেটা পরিষ্কার করা।
  • গোসলের আগে ওযু করা।
  • ডান দিকে তিনবার পানি ঢালা অতঃপর বাম দিকে তিনবার ও মাথার ওপর তিনবার পানি প্রবাহিত করা।

গোসল কখন সুন্নাত হয় 

চারটি কারণে গোসল সুন্নত হয়। কারণগুলো হলোঃ
  • জুমার নামাজের আগে গোসল করা সুন্নত
  • ঈদুল ফিতরের আগে ও ঈদুল আযহার নামাজের আগে গোসল করা সুন্নত।
  • এহরামের জন্য গোসল করা সুন্নত।
  • হাজী সাহেবদের জন্য আরাফাহে অবস্থানের সময় গোসল করা সুন্নত।
এতক্ষণ আমরা গোসল সম্পর্কে জানলাম কখন সুন্নত হয় তখন গোসল ফরজ হয় এবং গোসলের সুন্নত কয়টি ও কি কি বিস্তারিত। এখন আমরা জানবো ফরজ গোসল না করলে আমাদের কি কি ক্ষতি হয়, তাহলে চলুন জেনে নিই।

ফরজ গোসল না করলে আমাদের কি কি ক্ষতি হয়

পবিত্রতা হল ঈমানের অঙ্গ। আল্লাহ নিজে পবিত্র তাই সবাইকে পবিত্র থাকতে নির্দেশ করেছেন। পবিত্রতা বলতে শরীর মন দুইটাই বোঝানো হয়েছে। তবে আমাদের এখানে প্রশ্ন হচ্ছে ফরজ গোসল না করলে কি ক্ষতি হয়। তাহলে আমাদের জানার বিষয় হচ্ছে শারীরিকভাবে পবিত্র থাকার বিষয়। অপবিত্রতা নাপাক হয়ে যদি গোসল না করা হয় তাহলে কি ক্ষতি হতে পারে বা ফরজ গোসল না করলে কি কি ক্ষতি হতে পারে নিজে তা বর্ণনা করা হলোঃ
ওপর আমরা একটা বিষয় জেনেছি কখন আমাদের ওপর গোসল ফরজ হয়। বা কি কি কাজ করার পর আমাদের গোসল করতেই হবে। মূলত ফরজ গোসল না করে সব ধরনের কাজ করা যায়। শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলার ইবাদত ছাড়া। এমনকি কোরআন তেলাওয়াত করা যায় স্পর্শ ছাড়া। শুধুমাত্র অজু করে বাড়ির সকল কাজ করা যায় তবে গোসল করাই উত্তম।
ফরজ গোসল না করলে কি কি ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় আমাদেরকে এখন এটা জানতে হবে। আপনি কোন ইবাদত করতে পারবেন না। বা যদি আপনি এই অবস্থায় মারা যান তাহলে আপনি অপবিত্র অবস্থায় মারা গেলেন সুতরাং আপনাকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। এটাই একটি মুমিনের জন্য অনেক বড় ক্ষতির সম্মুখীন। এবং কবিরা গুনাহ, আর কবিরা গুনাহ খুব বড় গুনাহ যা আল্লাহ তাআলা তওবা ব্যতীত ক্ষমা করেন না। এর থেকে বড় প্রতি মানুষের জন্য আর কি হতে পারে। তবে যদি আপনি ফরজ গোসল না করে মানুষকে দেখানোর জন্য নামাজ আদায় করে থাকেন। তবে সেটা শিরকের পর্যায়ে চলে যায়। আর শির্কের গুনাহ আল্লাহ তাআলা কখনোই ক্ষমা করেন না। তাহলে আমরা জানতে পারলাম ফরজ গোসল না করার ভয়াবহতা।

গোসলের ওয়াজিব গুলো কি কি ? 

আপনার সমস্ত শরীর মাথা থেকে পা পর্যন্ত ধৌত করুন।
নাকের মাংসের নরম অংশ পর্যন্ত পানি পৌঁছিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
পুরো মুখে পানি না আসা পর্যন্ত মুখ ধৌত করুন।
হাত ভালো করে ঘষে ঘষে সারা শরীর ভিজিয়ে নিন।
গোসল ফরজ হওয়া অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ
কিছু কিছু সময় গোসল ফরজ হওয়া অবস্থায় একজন মুসলমানের প্রথম কাজ হলো নিজেকে শুদ্ধ করা একজন মুসলমান অযু বা গোসল ছাড়া যে কাজ গুলো করতে পারে না।
  • আলাহ তাআলার কোনো ইবাদত করতে পারে না।
  • নামাজ বা গোসলের দুয়া করতে পারে না।
  • পবিত্র কুরাআন স্পর্শ করতে পারে না।
  • মসজিদে অবস্থান করতে পারে না।
  • কাবা তাওয়াফ করতে পারেনা ।
  • জরুরি অবস্থায় বাধ্য না হলে মসজিদে প্রবেশ করবেন না ।

মাসিকের পর কিভাবে গোসল করতে হয়

মহিলাদের জন্য গোসল হলো যৌন মিলন ও মাসিকের পর শরীর সম্পন্ন ধৌত করা । ঋতুস্রাবের পর মহিলারা গোসল করতে পারে এমন দুটি পদ্ধতি রয়েছে। মহিলাদের জন্য ফরজ গোসল করতে হয় নিচে তা দেখুনঃ

মহিলাদের মাসিকের পর ফরজ গোসল

  • শরীর থেকে সমস্ত প্রসাধানি কাপড় বা গহনা সরিয়ে ফেলুন। শরীর এবং পানির মধ্যে কোন বাধা রাখা উচিত নয়।
  • ঝরনা চালু করুন এবং পানির নিচে দাঁড়ানো। গোসল শুরু করার আগে প্রতিদিনের মতো নিজেকে পরিষ্কার করে নিন।
  • আপনার মাথার পিছনে কাত করুন এবং নাকের ভেতরে ভালোভাবে পানি পৌছিয়ে পরিষ্কার করে নিন।
  • অন্তত একবার পানি দিয়ে আপনার সমস্ত শরীর পরিষ্কার করুন। আপনার শরীরকে বাম এবং ডান দিকে ঘুরিয়ে নিন যাতে সমস্ত অংশে পানি পৌঁছায়। আপনি এটি তিনবারও করতে পারেন কারণ এটি সম্পূর্ণ গোসলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
  • আপনার শরীরের প্রতিটি অংশে পানি পৌঁছেছে কিনা তা নিশ্চিত করুন । আপনি আপনার চুল এদিক ওদিক নাড়াতে পারেন যাতে আপনার মাথার ত্বকে ভালোভাবে পানি পৌঁছায়।
  • সম্পূর্ণ পরিষ্কার হবার ক্ষেত্রে আপনি সাবান বা শাওয়ার জেল ব্যবহার করতে পারেন।
  • গোসল শেষ করার পূর্বে আপনার পরিধানের পোশাকগুলো ভালোভাবে ধরে নিন

মাসিকের পর সুন্নাতের সাথে সম্পূর্ণ গোসল

  • বিসমিল্লাহ বলুন এবং তিনবার আপনার হাত ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।
  • প্রথমে অজু করে নিন তারপর আপনার সমস্ত পোশাক এবং গহনা বলল শরীর থেকে সরিয়ে ফেলুন এবং পানি দ্বারা ধৌত করুন।
  • আপনার বাম হাত দিয়ে আপনার গোপনাঙ্গ ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
  • দুর্গন্ধ দূর করতে সুগন্ধি সাবান ব্যবহার করুন অথবা সাভার জেল ব্যবহার করুন।
  • আপনার মাথায় তিনবার পানি ঢালুন যেন মাথা থেকে পা পর্যন্ত পানি পৌঁছায়।
  • পুরো শরীর পরিষ্কার করতে আপনারা হাত ভালোভাবে ব্যবহার করুন।

গোসল ফরজ কখন হয় এর শেষ কথা 

ফরজ গোসল বলতে আমাদের শরীর যদি কোন কিছু কারণে নাপাক থাকে তখন পরিষ্কার হতে যে গোসল করা হয় তাকেই ফরজ গোসল বলা হয়। কোন কারণে যদি আমাদের ওপর গোসল ফরজ হয়ে যায় যেমন সহবাস করে , মেয়েদের মাসিকের পর বা কোনো কারণে বির্যপাত হলে ইত্যাদি আরো কিছু্র জন্য যদি আমরা গোসল না করি তাহলে আমাদের নামাজ কাজা হয়ে যাবে  অন্যান্য এবাদত করতেও পারবোনা ফলে আমাদের কবিরাহ গুনাহ হবে। আশা করি উপরের আলোচনা থেকে ফরজ গোসল সম্পর্কে জেনেছেন এবং আরো জেনেছেন ফরজ গোসল না করলে কি হয়।
প্রিয় বন্ধুগণ আপনারা এতক্ষণ ধরে গোসল ফরজ কেন হয়, ফরজ গোসল না করলে কি ক্ষতি হয় এবং গোসলের নিয়ম কানুন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছেন। আর্টিকেলটি পরে যদি আপনি একটু হলেও উপকৃত হয়ে থাকেন তবে অবশ্যই এটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। পোস্টটি পড়ে যদি আপনি কোন সমস্যায় পড়ে থাকেন তবে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন আমরা সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। এমন তথ্যমূলক পোস্ট আরো পেতে আমাদের পেজ নিয়মিত ভিজিট করুন আমরা নিয়মিত পেজে নতুন নতুন আর্টিকেল পাবলিশ করে থাকি, আমাদের সাথেই থাকুন ।ধন্যবাদ

Leave a Comment