আমাদের শরীরের অন্যতম একটি পার্ট হলো কিডনি।এমন আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ পার্ট আছে তবে সেগুলোর থেকে কিডনি টা অনের বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনার হাত,পা, একটা চোখ,কান, যদি কখনো নষ্ট হয়ে যায়,তবুও আপনি বেঁচে থাকবেন।
কিন্তু যদি আপনার দুইটা কিডনি নষ্ট হয়ে যায় আপনার বেঁচে থাকার কোনো উপাই নাই। তাহলে চলুন আজ আমরা জেনে নেই কিডনি কি কি কারনে ড্যামেজ হয়ে যায়, এবং কি কি নিয়ম অনুসরণ করলে আমাদের কিডনি সুরক্ষিত থাকবে।কিডনি আমাদের মেরুদন্ডের হাড়ের দুই পাশে পাজরের খাঁচার নিচে অবস্থিত। তাদের কার্যকারিতা অপরিসীম।
কিডনির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো বর্জ্য পদার্থ উদ্বৃত্ত পানীয় ও অন্যান্য অমেধ্য ফিল্টার করা।
কিডনি ড্যামেজের কারণ
ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপকে বর্তমানে কিডনি ড্যামেজের মূল লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত করা হয়। হার্ট এবং মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালনের ব্যাঘাত ঘটাই , এমন সময়ও কিডনি রক্ত ঠিকভাবে পাস না করার কারণে কিডনি ফেল হবার সম্ভাবনা থাকে।
তার মধ্যে অন্যতম হলো নেশা দ্রব্য। মাদকের খারাপ দিকগুলো কি কি এই ব্যাপারে প্রশ্ন করলে এর উত্তরে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এর সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার ফারজানা রহমান বলেন , মাদক মানুষের স্বাভাবিক চিন্তাধারা বাধাগ্রস্ত করে। মাদক মন শরীর মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটায়। মাদক সেবনের ফলে লিভার নষ্ট হয়। মাদক সেবনের ফলে কিডনি ড্যামেজ হয়ে যায়।
এমন আরো বিভিন্ন রোগ সংক্রমণ যেমন হেপাটাইসিস বা এইডসের মত রোগও হতে পারে।
নেশা দ্রব্য সমূহ
- মারিজুয়ানা
- গাজা
- দেশি মদ
- বিদেশি মদ
- ধূমপান
- হিরোইন
- কোকেন
- ইয়াবা
- আফিন
- ফেনসিডিল
- চোলাই মদ
- রেকটিফায়েড স্পিরিট
- তাড়ি
- বিয়ার
- প্যাথেডিন
- ফার্মেন্টেড ওয়াশ(যাওয়া)
- মরফিন
- বুপ্রেনরফিন (টেমজেসিক ইঞ্জেকশন)
- পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট ও মিথাইল ইথাইল কিটোন
- আইস পিল
- ভায়াগ্রা
- টলুইন
এর বাহিরেও আরো নানা ধরনের নেশা দ্রব্য রয়েছে যেগুলো সেবনের ফলে কিডনি দ্রুত ড্যামেজ হয়ে যায়।
আরো পড়ুনঃ পিরিয়ডের সময় কি ব্যবহার করা উচিত
কিডনি রোগ একটি নিরব ঘাতক ব্যাধি
বাংলাদেশে ঘন্টায় সাত থেকে আট জনেরও বেশি মারা যায় কিডনি ড্যামেজ হয়ে।
আর দুই কোটিরও বেশি মানুষ কোন না কোন ভাবে আক্রান্ত হয়ে আছে কিডনি রোগে এটাই বলছে পরিসংখ্যান। কিন্তু আমরা অনেকেই তা জানি না। সেই ব্যাপারে খেয়ালও রাখি না। সাধারণত ৭৫-৮৫ ভাগ সময়ই কিডনির কার্যকর ক্ষমতা নষ্ট হবার পরেও বোঝা যায় না। ফলে সঠিক সময় পদক্ষেপ নেয়াটাও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
আবার অনেকেই এই ব্যধিকে নিরব ঘাতক ব্যাধি বলে আখ্যায়ত করেছেন।
প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া ,ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া , প্রস্রাবের রং লালচে বর্ণের হয়ে যাওয়া, প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া,প্রস্রাবে দূর্গন্ধ হওয়া, কোমরের দুই পাশে ব্যথা বা তলপেটে ব্যথা হওয়া, শরীর মুখ ফুলে যাওয়া ইত্যাদি কিডনি রোগের লক্ষণ বহন করে।
কিডনি রোগের প্রধান জটিলতা হল, প্রাথমিক অবস্থাতে কোনভাবেই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় না, ধীরে ধীরে কিডনি (কার্যকরী ক্ষমতা)রোগ যখন জটিল আকার ধারণ করে ঠিক তখনই রোগের লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায়। আর ঠিক তখনই অনেক দেরি হয়ে যায়।
আরো পড়ুনঃ টেনশনের শারীরিক লক্ষণ
কিডনি রোগের লক্ষণসমূহ
১। শরীরের বিভিন্ন অংশ পানি জমে ফুলে যাওয়া যেমন হাত-পা মুখ চোখ ইত্যাদি।
২। শরীরের বিভিন্ন অংশে চুলকানি ঘা পাচরা বা র্যাস হওয়া।
৩। প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া বা ব্যথা হওয়া।
৪। প্রস্রাব কম বেশি হওয়া বা প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া।
৫। মনোযোগ কমে যাওয়া।
৬। মাঝে মাঝেই মাথা ব্যাথা হওয়া।
৭। শরীরে ক্লান্তি ভাব আশা।
৮। বমি বমি ভাব হওয়া।
৯। সব সময় শীত শীত অনুভব হওয়া।
১০। ধীরে ধীরে ওজন কমে যাওয়া।
আরো পড়ুনঃ চুল পড়া বন্ধ করার ১০০ % কার্যকারী উপায়
গবেষণায় জানা গেছে ২০ থেকে ৩০ বা তারও বেশি নেফ্রাইটিসের কারণে, ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ ডায়াবেটিসের কারণে, এবং ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কিডনি ড্যামেজ হয় উচ্চ রক্তচাপের কারণে । এছাড়াও বংশগত কারণে, ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস সংক্রমণে, কিডনিতে পাথর হলে, বা অস্বাস্থ্যকর ডায়েট ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াযুক্ত মেডিসিন নেওয়ার ফলে কিডনি ড্যামেজ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বহুগুণ। বিশেষ করে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ কিডনি ড্যামেজ হওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
কিডনি ভালো রাখতে যা করবেন
কিডনি সুরক্ষিত রাখতে আমাদের প্রত্যেকেরই পরিমাণ মতো পানি পান করা আবশ্যক। অসুস্থতায় এবং ডায়েরিয়ার সময় পানির প্রয়োজনীয়তা বাড়ে। ডায়রিয়া বা বমি হলে প্রচুর পরিমাণে পানি এবং খাবার স্যালাইন খেতে হবে অবশ্যই। গর্ভবতী ও স্তন্যদায়ী মায়ের জন্য পানির প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। আবহাওয়ার পরিবর্তনে আমাদের পানির প্রয়োজনীয়তা কম বা বেশি হতে পারে। তবে স্বাভাবিকের তুলনায় পানি বেশি পান করা কিডনির জন্য উপকারি।
নিয়মিত চেকআপ করুন , একজন স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারীর সাথে নিয়মিত চেক-আপের ফলে আপনার কিডনির সুরক্ষিত নিশ্চিত করতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ জল পাইয়ের উপকারিতা এবং অপকারিতা
কিডনির সুস্বাস্থ্যে ১০ টি টিপস
১। শারীরিক ওজন সব সময় নিয়ন্ত্রণে রাখবেন। অতিরিক্ত ওজন বা সথূলতা কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
২। বেশিরভাগ সময় সুষম খাদ্য খাবার চেষ্টা করবেন। নিয়মিত ব্যায়াম এবং একটি সুষম খাদ্যের মাধ্যমে একটি স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা কিডনির কার্যকারিতা রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে।
৩। রোজ ৩০ মিনিট ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। রোজ না পারলেও সপ্তাহে অন্তত চার থেকে পাঁচ দিন সময় মত ব্যায়াম করুন হাটা,দৌড়ানো, সাইকেল চালানো, বা ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন।
আরো পড়ুনঃ যে সকল রোগের ঝুঁকি কমবে অলিভ অয়েল
৪। ধুমপানের ধারের কাছেও যাবেন না। পান জর্দা তামাক অ্যালকোহল জাতীয় নেশাদ্রব্য বর্জনীয়। ধুমপান কিডনির রক্ত সঞ্চালনে ব্যাঘাত ঘটায়। কিডনির কার্যকর ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। এর ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে !
৫। পর্যাপ্ত ঘুমান, দিনে প্রায় ৮ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুমান , এতে করে আপনার মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করবে।
৬। প্রচুর পরিমাণে তরল পান করে হাইড্রেটেড থাকুন। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা কিডনিকে শরীর থেকে টক্সিন এবং বর্জ্য পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে এটি কিডনিকে পাথর তৈরিতেও বাধা দেয়।
৭। নিশ্চিত করুন যে আপনি খুব বেশি ওটিসি পিল সেবন করবেন না।
৮। একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েট বজায় রাখুন।
৯। রক্তচাপ পর্যবেক্ষণ করুন। নিয়মিত রক্তচাপ নির্ঘণ করা এবং স্বাস্থ্যকর পরিসরের মধ্যে রাখার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া কিডনির ক্ষতি প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
১০। সুষম খাবার খান ফল শাকসবজি গোটা শস্য এবং চরবিহীন প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার কিডনির স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে।
কিডনি পরিষ্কার করে এমন ৮ টি খাবার
১। আপেল: আপেল রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতে এবং পেশাব পরিষ্কার রাখতেও বেশ কার্যকরী।
২। রসুন: রসুন কিডনি পরিষ্কার রাখতে খুবই কার্যকারী রসুন এ রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা দেহের প্রদাহ দূর করে
৩। লেবুর শরবত: হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানো ভিটামিন সি, এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি ও রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। হজমে সাহায্য করে।
৪। অলিভ অয়েল: অলিভ অয়েল এর সম্পর্কে যতই বলি না কেন তার গুণাবলী বলে শেষ করার মত নয়। অলিভয়েলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে । অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের অক্সিডেটিভ চাপ কমিয়ে দীর্ঘস্থায়ী রোগকে দূরে রাখুন।
৫। সবুজ শাকসবজি: সবুজ শাকসবজি ভিটামিন ও খনিজ লবণের উৎস সবুজ শাকসবজিতে থাকে ভিটামিন এ যা দেহের বৃদ্ধি এবং দৃষ্টি শক্তি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
৬। ক্যানবেরি জুস: চেরির মত কেন বেরিতেও রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি ও ম্যাগনেসিয়াম এ ভরপুর।
৭। হলুদ: নিয়মিত কাঁচা হলুদ খেলে সুস্থ থাকবে সারা শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ এমনটাই বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
৮। শশা: সাথে পানির পরিমাণ বেশি থাকে। শসা আপনার খাদ্য তালিকায় যোগ করতে ভুলবেন না। তাছাড়া শসা তে মূত্রবর্ধক প্রভাব রয়েছে ,যা কিডনিতে পাথর জমতে দেয় না ফলে কিডনির কার্যক্রমে বাধা গ্রস্থ হয় না।
লেখকের শেষ মন্তব্য
আজকের আরটিকেল থেকে আমরা জানলাম আমাদের কিডনি কিভাবে সুরক্ষিত রাখা যায় আশা করি আপনারা মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং এখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য জানতে পেরেছেন আপনাদের ভবিষ্যৎ জীবনে হয়তো কাজে লাগবে আপনাদের কোন মন্তব্য থাকলে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন ধন্যবাদ