সময় নিয়ে জীবনানন্দের কবিতা বা সময়ের কবিতা সম্পর্কে কি আপনি জানতে চান তাহলে পোস্টটি আপনার জন্য। আজ আমি এই পোস্টে সময়ের কবিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। তাহলে আপনি সময় নিয়ে জীবনানন্দের কবিতা ভালোভাবে জানতে পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
জীবনানন্দ দাস ছিলেন একজন খুব ভালো কবি। তিনি সকল ধরণের কবিতার মত অনেক ধরণের সময়ের কবিতা লিখেছেন। এখানে আপনি সময় নিয়ে জীবনানন্দের কবিতা দেখতে পাবেন। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক সময় নিয়ে জীবনানন্দের কবিতা গুলো।
সূচিপত্রঃ সময় নিয়ে জীবনানন্দের কবিতা
- সময় নিয়ে জীবনানন্দের কবিতা
- কবিতা – পৃথিবী ও সময়
- কবিতা – শেষ হল জীবনের সব লেনদেন
- কবিতা – অনেক মুহূর্ত আমি করেছি ক্ষয় করে
- সময় নিয়ে লেখা জীবনানন্দের কবিতা – আজকের এক মুহূর্ত
- কবিতা – যতোদিন পৃথিবীতে
- সময় নিয়ে জীবনানন্দ দাসের কবিতা – সময়ের কাছে
- শেষ কথা
সময় নিয়ে জীবনানন্দের কবিতা
জীবনানন্দ দাস সময় নিয়ে যে কবিতা গুলো লিখেছেন তা পড়লে সময় আমরা অনেক কিছু জানতে পারবো। আবার সময়ের সম্মান ও করতে পারবো। নিচে আমি সময় নিয়ে জীবনানন্দের কবিতা গুলো জানাবো। আপনি যদি জীবনানন্দ দাস এর কবিতা পড়তে পছন্দ করেন তাহলে আপনি এখানে সময় নিয়ে জীবনানন্দের কবিতা গুলো পড়তে পারবেন।
কবিতা – পৃথিবী ও সময়
সময়ের উপকণ্ঠে রাত্রি প্রায় হয়ে এল আজ
সূর্যকে পশ্চিমে দেখি সারা শতাব্দীর
অক্লান্ত রক্তের বোঝা গুছায়ে একাকী
তবুও আশার মত মেঘে মেঘে বলোয়িত হয়ে
শেষ আলো ঢেলে যায়, জ্যোতিঃপ্রাণধর্মী সূর্য অই,
একদিন অ্যামিবার উৎসরণ এনেছিল,
জীবনের ফেনশীর্ষ সিন্ধুর কল্লোল এক দিন
মানুষকে পেয়ে, না-মর্মী মানুষ সেই দিন
ভয় পেত, গুহায় লুকাত, তবু সূর্যকরোজ্জ্বল
সোনালী মানবী তাকে হাঁ বলালো, নীল
আকাশ নগরীরেখা দেখা দিল, শঙ্খ আমলকী
সাগর অলিভবন চেনা গেল রোদ্রের ভিতরে,
শ্বেতাশ্বতর প্লেটো আলোকিত পৃথিবীর রূপ
অনাদির দায়ভাগে উৎসারিত রক্তের নদীর
শিয়রে আশার মত জেগে উৎসাহিত সূর্য করে
সহসা নতুন হিংসা রক্ত গ্লানিমার কাছে প্রতিহত হয়ে
ধীরে ধীরে নিঃশেষে ফুরায়ে গেল তবু।
আরো পড়ুনঃ শীতের আগমনী বার্তা – শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে কবিতা
ভাই বোন-স্মৃতি শান্তি হননের ঘোরে উদ্বেলিত
বহতা নদীর মত আজো এই পৃথিবী চলেছে।
তবুও তো সেই উদ্ঘাতিনী
নদীরমণীর শব্দ কানে নিয়ে, প্রাণে
আকাশে জ্যোতিষ্ক জ্বলে হস্তা অভিজিৎ,
অনুরাধা শতভিষা লুব্ধক স্বাতী,
পৃথিবীতে হৃদয় এরো গতিপথে বর্ণালির আভা
সম্পূর্ণ দীপ্তির মত আলোকিত ক্রমেই আলোকিত হতে চায়।
লণ্ডন রুশিয়া গ্রীস দ্বীপপুঞ্জ কলকাতা চীন
অগণন কনফারেন্সে বিকীর্ণ উরোপা,
আমেরিকা, যেন বীতবর্ষণের কৃষ্ণমেঘ নক্ষত্রের পথে,
ক্ষণিক উজ্জ্বল হয়ে ক্লান্তি ক্লেদ ভয় অন্ধকার হতে চায়
এখুনি আবার তবু, প্রকৃতিতে সূর্য আসে, অস্তের আকাশে
চলে যায়, অস্তগতিহীন শুভ্র জনহৃদয়ের
সূর্য নগরীর দিকে যেতে হবে চেতনায় মানুষের সময় চলেছে।
কবিতা – শেষ হল জীবনের সব লেনদেন
শেষ হল জীবনের সব লেনদেন,
বনলতা সেন।
কোথায় গিয়েছ তুমি আজ এই বেলা
মাছরাঙা ভোলেনি তো দুপুরের খেলা
শালিখ করে না তার নীড় অবহেলা
উচ্ছ্বাসে নদীর ঢেউ হয়েছে সফেন,
তুমি নাই বনলতা সেন।
তোমার মতন কেউ ছিল কি কোথাও?
কেন যে সবার আগে তুমি চলে যাও।
কেন যে সবার আগে তুমি
পৃথিবীকে করে গেলে শূন্য মরুভূমি
(কেন যে সবের আগে তুমি)
ছিঁড়ে গেলে কুহকের ঝিলমিল টানা ও পোড়েন,
কবেকার বনলতা সেন।
কত যে আসবে সন্ধ্যা প্রান্তরে আকাশে,
কত যে ঘুমিয়ে রবো বস্তির পাশে,
কত যে চমকে জেগে উঠব বাতাসে
হিজল জামের
বনে থেমেছে স্টেশনে বুঝি রাত্রির ট্রেন,
নিশুথির বনলতা সেন।
কবিতা – অনেক মুহূর্ত আমি করেছি ক্ষয় করে
অনেক মুহূর্ত আমি করেছি ক্ষয়
করে ফেলে বুঝছি সময়
যদিও অনন্ত, তবু প্রেম যেন অনন্ত নিয়ে নয়।
তবু তোমাকে ভালোবেসে
মুহূর্তের মধ্যে ফিরে এসে
বুঝেছি অকূলে জেগে রয়
ঘড়ির সময়ে আর মহাকালে যেখানেই রাখি এ হৃদয়।
সময় নিয়ে জীবনানন্দের কবিতা – আজকের এক মুহূর্ত
হে মৃত্যু,
তুমি আমাকে ছেড়ে চলেছো বলে আমি খুব গভীর খুশি?
কিন্তু আরো খানিকটা চেয়েছিলাম,
চারিদিকে তুমি হাড়ের পাহাড় বানিয়ে রেখেছো;
যে ঘোড়ায় চড়ে আমি
অতীত-ঋষিদের সঙ্গে আকাশে নক্ষত্রে উড়ে যাবো
এইখানে মৃতবৎসা, মাতাল, ভিখারি ও কুকুরদের ভিড়ে
কোথায় তাকে রেখে দিলে তুমি?
এতদিন বসে পুরোনো বীজগণিতের শেষ পাতা শেষ করতে-না-করতেই
সমস্ত মিথ্যা প্রমাণিত হয়ে গেলো,
কোন-এক গভীর নতুন বীজগণিত যেন
পরিহাসের চোখ নিয়ে অপেক্ষা করছে;
আবার মিথ্যা প্রমাণিত হবে বলে?
সে-ই শেষ সত্য বলে?
কবিতা – যতোদিন পৃথিবীতে
যতোদিন পৃথিবীতে জীবন রয়েছে
দুই চোখ মেলে রেখে স্থির
মৃত্যু আর বঞ্চনার কুয়াশার পায়ে
সত্য সেবা শান্তি যুক্তির
নির্দেশের পথ ধরে চলে
হয়তো বা ক্রমে আরো আলো
পাওয়া যাবে বাহিরে হৃদয়ে,
মানব ক্ষয়িত হয় না জাতির ব্যক্তির ক্ষয়ে।
আরো পড়ুনঃ শীতের পিঠা নিয়ে উক্তি ২০২৩ – শীতের পিঠা নিয়ে কবিতা
ইতিহাস ঢের প্রমাণ করেছে
মানুষের নিরন্তর প্রয়াণের মানে
হয়তো-বা অন্ধকার সময়ের থেকে
বিশৃঙ্খল সমাজের পানে
চলে যাওয়া, গোলক ধাঁধার
ভুলের ভিতর থেকে আরো বেশি ভুলে,
জীবনের কালোরঙা মানে কি ফুরুবে
শুধু এই সময়ের সাগর ফুরুলে।
জেগে ওঠে তবুও মানুষ রাত্রিদিনের উদয়ে,
চারিদিকে কলরোল করে পরিভাষা
দেশের জাতির দ্ব্যর্থ পৃথিবীর তীরে,
ফেণিল অস্ত্র পাবে আশা?
যেতেছে নিঃশেষ হয়ে সব?
কি তবে থাকবে?
আধার ও মননের আজকের এই নিস্ফল রীতি
মুছে ফেলে আবার সচেষ্ট হ’য়ে উঠবে প্রকৃতি?
ব্যর্থ উত্তরাধিকারে মাঝে মাঝে তবু
কোথাকার স্পষ্ট সূর্য বিন্দু এসে পড়ে
কিছু নেই উত্তেজিত হলে,
কিছু নেই স্বার্থের ভিতরে,
ধনের অদেয় কিছু নেই, সেই সবি
জানে এ খন্ডিত রক্ত বণিক পৃথিবী,
অন্ধকারে সবচেয়ে সে শরণ ভালো
যে প্রেম জ্ঞানের থেকে পেয়েছে গভীরভাবে আলো।
সময় নিয়ে জীবনানন্দের কবিতা – সময়ের কাছে
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চলে যেতে হয়
কি কাজ করেছি আর কি কথা ভেবেছি।
সেই সব একদিন হয়তো বা কোনো এক সমুদ্রের পারে
আজকের পরিচিত কোনো নীল আভার পাহাড়ে
অন্ধকারে হাড় কঙ্করের মতো শুয়ে
নিজের আয়ুর দিন তবুও গণনা করে যায় চিরদিন,
নীলিমার থেকে ঢের দূরে সরে গিয়ে,
সূর্যের আলোর থেকে অন্তর্হিত হয়েঃ
পেপিরাসে সেদিন প্রিণ্টিং প্রেসে কিছু নেই আর,
প্রাচীন চীনের শেষে নবতম শতাব্দীর চীন
সেদিন হারিয়ে গেছে।
আজকে মানুষ আমি তবুও তো সৃষ্টির হৃদয়ে
হৈমন্তিক স্পন্দনের পথের ফসল,
আর এই মানবের আগামী কঙ্কাল,
আর নব—
নব নব মানবের তরে
কেবলি অপেক্ষাতুর হয়ে পথ চিনে নেওয়া
চিনে নিতে চাওয়া,
আর সে-চলার পথে বাধা দিয়ে অন্নের সমাপ্তিহীন ক্ষুধা;
(কেন এই ক্ষুধা-
কেনই সমাপ্তিহীন!)
যারা সব পেয়ে গেছে তাদের উচ্ছিষ্ট,
যারা কিছু পায় নাই তাদের জঞ্জাল,
আমি এই সব।
সময়ের সমুদ্রের পাড়ে
কালকের ভোরে আর আজকের এই অন্ধকারে
সাগরের বড়ো শাদা পাখির মতন
দুইটি ছড়ানো ডানা বুক নিয়ে কেউ
কোথাও উচ্ছল প্রাণশিখা
জ্বালায়ে সাহস সাধ স্বপ্ন আছে- ভাবে।
ভেবে নিক- যৌবনের জীবন্ত প্রতীকঃ তার জয়!
প্রৌঢ়তার দিকে তবু পৃথিবীর জ্ঞানের বয়স
অগ্রসর হয়ে কোন আলোকের পাখিকে দেখেছে?
আরো পড়ুনঃ বৃষ্টি নিয়ে রোমান্টিক কবিতা – বৃষ্টি নিয়ে রোমান্টিক স্ট্যাটাস
জয়, তার জয়, যুগেযুগে তার জয়!
ডোডো পাখি নয়।
মানুষেরা বার বার পৃথিবীর আয়ুতে জন্মেছে,
নব নব ইতিহাস সৈকতে ভিড়েছে,
তবুও কোথাও সেই অনির্বচনীয়
স্বপনের সফলতা- নবীনতা- শুভ্র মানবিকতার ভোর?
নচিকেতা জরাথুস্ট্র লাওৎ-সে এঞ্জেলো রুশো লেনিনের মনের পৃথিবী
হানা দিয়ে আমাদের স্মরণীয় শতক এনেছে?
অন্ধকারে ইতিহাসপুরুষের সপ্রতিভ আঘাতের মতো মনে হয়
যতই শান্তিতে স্থির হয়ে যেতে চাই,
কোথাও আঘাত ছাড়া তবুও আঘাত ছাড়া অগ্রসর সূর্যালোক নেই।
হে কালপুরুষ তারা, অনন্ত দ্বন্দ্বের কোলে উঠে যেতে হবে
কেবলি গতির গুণগান গেয়ে— সৈকত ছেড়েছি এই স্বচ্ছন্দ উৎসবে,
নতুন তরঙ্গে রৌদ্রে বিপ্লবে মিলনসূর্যে মানবিক রণ
ক্রমেই নিস্তেজ হয়, ক্রমেই গভীর হয় মানবিক জাতীয় মিলন?
নব-নব মৃত্যুশব্দ রক্তশব্দ ভীতিশব্দ জয় ক’রে মানুষের চেতনার দিন
অমেই চিন্তায় খ্যাত হয়ে তবু ইতিহাসভুবনে নবীন
হবে না কি মানবকে চিনে- তবু প্রতিটি ব্যক্তির ষাট বসন্তের তরে!
সেই সব সুনিবিড় উদ্বোধনে- ‘আছে আছে আছে’ এই বোধির ভিতরে
চলেছে নক্ষত্র, রাত্রি, সিন্ধু, রীতি, মানুষের বিষয় হৃদয়,
জয় অস্তসূর্য, জয়, অলখ অরুণোদয়, জয়।
উপরের জীবনানন্দ দাসের এই সময় নিয়ে জীবনানন্দের কবিতা গুলো banglashikha.com ও wikisource.org ওয়েবসাউইট থেকে নেওয়া হয়েছে
সময় নিয়ে জীবনানন্দের কবিতা – শেষ কথা
কবি জীবনানন্দ বাংলাদেশের প্রকৃতিকে ভালোবেসে, বাংলাদেশের মাঠ প্রান্তর, নদী, গাছপালা, ফুল ফল, পশু পাখি পতঙ্গ সবকিছু দেখে মুগ্ধ হয়ে অনেক কবিতা লিখছেন। আর অনেক মানুষ সেই কবিতা পড়েই কবির মনের ভালোবাসা বুঝতে পারে। সেরকম ভাবে কবি সময় নিয়েও অনেক কবিতা লিখেছে। যাতে সময়ের মূল্য ও গুরুক্ত নিয়ে কথা বলা হয়েছে। উপরে আপমি সময় নিয়ে জীবনানন্দের কবিতা গুলো জানিয়েছি। ২২৪৯৮