আজকে আমরা স্কিনের বিষয় নিয়ে জানব, সাধারণত মানুষ যেসব সমস্যা নিয়ে কোয়ারি করে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ব্রণ। আজকে সেই ব্রণ নিয়েই বিস্তারিত তুলে ধরা হলো। ব্রণ কি?কেন হয় ? বা তার প্রতিকার কি? চলূন জেনে নেই।
ব্রণ কি ?
আমাদের স্কিনের যে হেয়ার ফলিকল গুলা রয়েছে , হেয়ার ফলিকলের গ্রুপটা জেকলাউ হয়ে ব্রণ টা তৈরি হয় । ক্লক কেন হয়? হেয়ার ফলিকলের রুটের ভেতরে যখন কোন ডেট সেঞ্জে জমা হয় , বা আমাদের স্কিনে নরমাল যে অয়েল টা সিক্রেশন হয় , যেটাকে ডাক্তারি ভাষায় ডাক্তাররা সিবাম বলে থাকে। সেই সিবাম সিক্রেশন যদি বেশি হয় সেটা হেয়ার ফল এর রুট গুলোকে বন্ধ করে দেয় ফলে ব্রণ দেখা দেয়
ব্রণ কেন হয়
খুব বেশি যদি কারো হরমোনাল ডিজর্ডার থাকে, কারো কারো পলিসির চেয়ে গোফারি সিংডম বেশি থাকে। কারো বা থাইরয়েডের সমস্যা থাকে আরো নানা বিভিন্ন সমস্যা থাকতে পারে। হরমোনাল ওঠা নামা বা ইন ব্যালেন্স যেটাকে বলে এটা যদি বেশি থাকে তাদেরও ব্রণ হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ একটা কারণ হতে পারে। আমরা যারা বাহিরের খবার অর্থাৎ ভাজাপোড়া বা ফাস্টফুড জাতীয় খাবারের উপরে অনেক বেশি ডিপেন্ডেন্ট থাকি তাদেরও ব্রণ হবার টেন্ডেন্সিটা বেশি থাকে।
আরো পড়ুনঃ কপালে ছোট ছোট ব্রণ দূর করার
ডেইলি লাইফে আমাদের অনেক ধুলাবালি ফেস করতে হয় সেটা নানান কারণে আমাদের চলাফেরার কারণে,কাজের কারণে, বাইকে ঘুরাঘুরির কারণে বা সেটা যে কোন ক্ষেত্রে হতে পারে। এই ধুলাবালি জমেও আপনার স্কিনের রুট গুলোকে আটকে দিতে পারে।
মেয়েদের ক্ষেত্রে যারা অতিরিক্ত মেকআপে অভ্যস্ত ম্যাক্সিমাম সময় মেয়েরা মেকআপ করতে পছন্দ করে। মেকআপে বিভিন্ন কেমিক্যালে ভরপুর। অনেক সময় অনেকের স্ক্রিনে নানান ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। এবং মেকআপ করার পরে সেটা ভালোভাবে ক্লিন না করার ফলে হেয়ার ফলিকলের রুট বন্ধ করে দেয় এবং ব্রণ হবার আশঙ্কাও বেড়ে যায়।
মাথায় খুশকি হওয়া একটি সমস্যা । খুশকি সাধারণত কমবেশি সবার মাথাতেই থাকে, যাদের মাথায় খুশকি সমস্যাটা কম বা বেশি যেমনই থাকুক না কেন খুশকি রোধ করতে অবশ্যই খুব ভালো একটা অ্যান্টিড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পু ইউজ করতে হবে। কারণ খুশির সমস্যার কারণেও ব্রণ কন্ট্রোল হতে চায় না এমনটাই বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
কোন বয়সে ব্রণ বেশি হয়
খুব কমন একটা প্রশ্ন আমাদের সকলের মনের মধ্যেই থাকে, সেটা হল ব্রণ আসলে কোন বয়স থেকে শুরু হয় বা কোন বয়সের মধ্যে বেশি দেখা দেয়। মূলত ব্রণ টিনেজ লাইফ থেকেই স্টার্ট হয় এডাল্ট লাইফেও ব্রণ হতে পারে, এবং সেটা ৩৫ থেকে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত যেতে পারে। কারণ হারমোনাল ডিজ ব্যালেন্স উঠানামাটা শুরু হয় টিনেজ লাইফ থেকেই। সেটা বেশিও থাকে ওই সময়টাতে, কারণ সে সময়ে ছেলে মেয়েদের সীমান সিক্রেশন হয় । ফলে সেই সময়টাতে ব্রণ হবার টেন্ডেন্সি টা বেশি থাকে। তার মানে এই না যে তার বয়স বেড়ে এডাল্ট হয়ে গেলে তখন আর ব্রণ হবে না। তখনও ব্রণ হতে পারে আবার কারো কারো ক্ষেতে নাও হতে পারে। এভাবে ৩৫ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত যতদিন সে ইয়াং থাকবে ততদিন এই টেন্ডেন্সি থাকে।
কোন খাবার খেলে ব্রণ হবার সম্ভবনা কম থাকে
যেসব খাবার খেলে ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সবুজ শাকসবজি, রঙিন ফলমূ্ল , মধু, কালোজিরার তেল, ড্রাই ফুডস , তরল যুক্ত খাবার , অবশ্যই তৈলাক্ত না , আপনি বিভিন্ন ফলের জুস করে খেতে পারেন , মিষ্টি কুমড়া , ইত্যাদি। তবে ভাজাপোড়া ফাস্টফুড তৈলাক্ত খাবার এগুলো বর্জন করতে হবে।
ত্বকের স্বাধারণ যত্ন
সাধারণত আমরা ত্বকের যত্ন নিয়েই থাকি তবে, হয়তো সেটা সঠিক টাইমে হয় না বা সঠিক নিয়মে হয় না যার ফলে আমরা এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারি না। ত্বকের সাধারণ যত্নে আমরা যা করতে পারি সেগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ-
- নিয়মিত পানি দ্বারা মুখ ধৌত করা।
- বাজারের সস্তা পণ্য ব্যবহার না করা।
- মুখে তৈলাক্ত ভাব থাকলে প্রতিদিন সকাল বিকাল ভাল ব্রান্ডের ফেস ওয়াশ দিয়ে স্ক্রিন ক্লিন করা।
- সপ্তাহে অন্তত দুই দিন ন্যাচারাল অলোভেরা জেল ব্যবহার করা।
- সপ্তাহে অন্তত দুইদিন কাঁচা হলুদ (কস্তুরি হলুদ) ব্লেন্ড করে স্কিনে ব্যবহার করা।
- আপনি চাইলে মুসুর ডাল ব্লেন্ড করেও স্কিনে ব্যবহার করতে পারেন এতে স্কিন সফট থাকে।
- প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা।
- রাত না জেগে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমনো।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ব্যবহার করা।
- মোশ্চারাইজার ব্যবহার করা।
- সকাল এবং রাতে টপ ক্লিনজার দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করা।
- সর্বশেষে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা
স্কিনে মধু ব্যবহার করতে পারেন মধুতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। ব্রেকিং সোডা এবং লেবুর রস দিয়ে ফেসপ্যাক ব্যবহার করে এক্সফলিয়েট করতে পারেন, এতে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে সবচাইতে সহজ উপায় হচ্ছে টমেটো পিওরির ব্যবহার। টমেটো ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর সাহায্য করে।
ব্রণ থেকে দ্রুত মুক্তির উপায়
চন্দন: চন্দনে আছে প্রদাহরোধী ও জীবাণুনাশক উপাদান। যেটা স্কিনে বিদ্যুতের মত কাজ করে। পর্যাপ্ত পরিমাণ চন্দন দুধে মিশিয়ে নিন এর সাথে সামান্য কর্পূর মেশাতে পারেন এবার উপাদান গুলো ভালোভাবে মিশিয়ে নিন তারপর সারারাত ব্রনের উপরে লাগিয়ে রাখুন। আরো ভালো ফলাফল পেতে চন্দনের সঙ্গে গোলাপ জল মেশাতে পারেন, এবার মিশ্রণটি ব্রনের উপরে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
মধু: মধুতে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক যা ব্রনের বাড়তি তরল পদার্থ কমিয়ে সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে। একটি তুলার রোল করে বা গোল করে গুলি তৈরি করুন এবং মধু দিয়ে ভিজিয়ে নিন এবং সারারাতের জন্য ব্রণের উপরে লাগিয়ে রাখুন পরদিন সকালে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
টুথপেস্ট: ব্রণ দ্রুত দূর করতে সাধারণ সাদা পেস্ট বেশ কার্যকর। যখন ব্রণ উঠে সঙ্গে সঙ্গে ব্রণের উপরে পেস্ট লাগিয়ে সারারাত রেখে দিন সকাল হতে হতে দেখবেন স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এটা এক প্রকার জাদুর মতো কাজ করে। এটা ব্রণ শুকনো হতে এবং ব্রণের জায়গার ফোলা অংশ কমাতে সাহায্য করে।
বরফ: বরফ লালচে ভাব ও সংক্রমণ কমাতে ব্যাপক সাহায্য করে এবং ব্রণের আকারও ছোট করতে সাহায্য করে একটা পাতলা কাপড়ের মধ্যে বরফের টুকরো নিন এবং ব্রণের উপরে এক থেকে দেড় মিনিট ধরে আলতো ভাবে মালিশ করতে থাকুন। তিন থেকে চার মিনিট পর ঠিক একই কাজ করুন তবে মনে রাখবেন প্রতিবারেই বরফ মালিশ করার সময় একসাথে দুই বারের বেশি মালিশ করবেন না এইভাবে দিনে তিন থেকে চারবার বরফ মালিশ করলেই দ্রুত ব্রণ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
লেবুর রস: লেবুর রস আন্টিসেপটিক এর মত কাজ করে যা সংক্রমণ ও লালচে ভাব দূর করে। যদি সম্ভব হয় ব্রণের ওপর তাজা লেবুর রস লাগিয়ে নিন যতক্ষণ সম্ভব রেখে দিন তবে জ্বালা ভাব সৃষ্টি হলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তবে খুব স্পর্শকাতর না হলে সারারাত লেবুর রস লাগিয়ে রাখুন এবং সকাল হলে ধুয়ে ফেলুন।
ডিমের সাদা অংশ: ডিমের সাদা অংশ ব্রণ দূর করতে দারুন কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। একটি পাত্রে ডিমের সাদা অংশ নিন এবং সেখানে লেবুর রস নিয়ে ভালোভাবে মিশ্রণ করুন এবার সারারাতের জন্য ব্রনের উপরে মাস্কের ন্যায় ব্যবহার করুন সকালে তা ধুয়ে ফেলুন।
উক্তে বর্ণিত টিপস গুলো ফলো করুন আশা করি ভালো ফলাফল পাবেন।
ব্রণের চিকিৎসা
ব্রনের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সাধারণত তিন থেকে ছয় মাস সময় লাগতে পারে। তবে অনেকেই বলে ব্রণের মূলত কোন চিকিৎসা নেই এটা সম্পূর্ণই ভুল কথা। বর্তমানে ত্বকের বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা ডাক্তাররা দিয়ে থাকে যেগুলো আগের থেকে অনেক উন্নত। মূলত ব্রনের চিকিৎসা অনেক লং টাইম হয়ে থাকে কারো কারো ক্ষেত্রে সেটা তিন মাসেই স্বাভাবিক হয়ে যায় এবং কারো কারো ক্ষেত্রে সেটা ছয় মাস পর্যন্ত যেতে পারে। তবে মোটকথা যেটা ব্রণ কন্ট্রোলে রাখতে হবে। ব্রণ এর মাত্রা যেমনই হোক না কেন ব্রণ হওয়া মাত্রই আপনাকে একজন স্কিন ডাক্তারের কনসাল্টেশন নিতে হবে এবং রেগুলার ফলোআপে থাকতে হবে।
ব্রণে দাগ বা গর্ত হলে তার চিকিৎসা
ব্রণ হবার পরে সাধারণত ব্রণ থেকে দাগ হয়ে যায় বা গর্ত হয়ে যায় যেটাকে ডাক্তারি ভাষায় অ্যাকানথোনিস নিগ্রিকানস বা অ্যাট্রফিক অ্যাকন স্কার বলে থাকে । বর্তমানে এগুলো খুব ভালো ভালো চিকিৎসা বিজ্ঞান তৈরি করেছে। এর মধ্যে সবথেকে উন্নত যে চিকিৎসাটা সেটা হলো লেজার ট্রিটমেন্ট। বর্তমানে লেজার ট্রিটমেন্ট দিয়ে মুখের গর্তকে এমনভাবে সারিয়ে তুলছে যেটা প্রায় জাদুকরের মতই বলা যেতে পারে । যেটা আগে মানুষ কখনো চিন্তাও করতে পারে নি। সুতরাং বোঝা গেল যে আমাদের কিনে ব্রনের কারণে যে অস্বাভাবিক অর্থ হয়ে থাকে লেজার ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে সেই গর্তকেও স্বাভাবিকভাবে সারিয়ে তোলা সম্ভব।
এর পাশাপাশি খাবারের দিকেও মনোযোগ দেওয়া জরুরী। ভালো ঘুমের প্রয়োজন খাবারের মধ্যে তৈলাক্ত যুক্ত খাবার ভাজাপোড়া বা ফাস্টফুড অ্যাভয়েড করা এবং প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খাওয়া এর পাশাপাশি সবুজ শাকসবজি রঙিন ফলমূল যেগুলো আমাদের স্কিনকে সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করে।
ব্রণ থেকে মুক্তির উপায় এর শেষ কথা
আমাদের সমাজের প্রায় ৭০% মানুষের ব্রণ নিয়ে সমস্যায় ভূগছে। ঠিক এই সমস্যা থেকেই সমাধান পেতে এই আর্টিকেলটি আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি আশা করছি এই আর্টিকেল থেকে আপনি উপকৃত বিষয়গুলো আপনার জীবনে বাস্তবায়ন করতে পারবেন। এবং সেখান থেকে ভালো ফলাফল নিশ্চিত করতে পারেন। আমাদের পোস্টটি আপনার ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন এবং অন্যদেরকেও পড়ার সুযোগ করে দেবেন। যদি আপনার মন্তব্য প্রকাশ করার ইচ্ছা থাকে তবে কমেন্ট বক্সে আপনার মন্তব্য প্রকাশ করতে পারেন।