হস্তমৈথুন বা মাস্টারবেশন সম্পর্কে জানেনা এমন ছেলে মেয়ে নেই বললেই চলে। এই বাক্যটার সাথে আমরা এমন ভাবে পরিচিত যেন হস্তমৈথুন একটি নিত্যদিনের সাথী।
হস্তমৈথুন কি ? হস্তমৈথুন করলে কি হয় ? হস্তমৈথুনের ক্ষতিকর দিকগুলো কি কি ? হস্তমৈথুন থেকে পরিত্রাণ পাবার উপায় কি ? চলুন জেনে নেই।
হস্তমৈথুন বা মাস্টারবেশন এমন একটি বিষয় যেটি আমাদেরকে সাময়িক সময়ের জন্য উত্তেজনার সৃষ্টি করে। পুরুষ এবং নারী উভয়ের ক্ষেত্রেই এটি একটি সাধারণ ক্রিয়া। যা যৌনতৃপ্তিকে সন্তুষ্টি করতে সাহায্য করে। তবে এই মাস্টারবেশন এমন একটি অভ্যাস যদি কাউকে আক্রমণ করে তবে সে এই বদ অভ্যাসকে সহজে পরিত্যাগ করতে পারে না।
ফলে তার যৌন জীবনকে এক বিশাল পরিক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন মাস্টারবেশন এমন একটি বিষয় যা নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় করলে স্বাস্থ্যের জন্য সাময়িক উপকার আছে। তবে যদি কেউ মাস্টারবেশন কে অভ্যাসে পরিণত করে তবে তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা যৌন জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলতে পারে।
হস্তমৈথুন কি
হস্তমৈথুন হলো নিজের যৌনাঙ্গে নিজের হাত বা যে কোন পিচ্ছিল বস্তু দ্বারা সঞ্চালন ঘটিয়ে যৌনতৃপ্তি উপভোগ করা তথা হস্তমৈথুন বা মাস্টারবেশন।
হস্তমৈথুনের নানা ক্ষতিকর দিকগুলো
১। অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের ফলে পুরুষের যৌনাঙ্গ নিস্তেজ হয়ে যেতে পারে । হস্তমৈথুনের ফলে লিঙ্গতে যেমন প্রেসার পড়ে তাতে লিঙ্গের পাশের রগ গুলো ছিড়ে যেতে পারে বা চিকন হয়ে যেতে পারে ।ফলে লিঙ্গ তার কাজ করা বন্ধ করে দেয় ।
২। আমরা সকলেই জানি আমাদের লিঙ্গতে কোন হাড় নেই।ফলে আমরা যখন হাড়ের তৈরি হাত দ্বারা লিঙ্গের উপর সঞ্চালন করি তখন রগে প্রচুর প্রেসার পড়ে ফলে রগ নিস্তেজ হয়ে পড়ে।
৩। হস্তমৈথুনের ফলে আমাদের শরীরের অন্যান্য অঙ্গ কে ক্ষতিগ্রস্ত করে। দেহে আমিষের ঘাটতি দেখাই ফলে পুরো শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
৪। সামান্য উত্তেজনায় যৌনাঙ্গ থেকে তরল পদার্থ বের হওয়ার মাধ্যমে আমাদের শুক্রাণুর পার্সেন্টেন্স কমে যায়। ফলে ওই শুক্রাণু দ্বারা বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। এবং সমাজে ওই পুরুষ বন্ধ্যাত্ব রূপে পরিণত হতে পারে ।
৫। চোখের ক্ষতি হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ মিষ্টি কুমড়া শাকের উপকারিতা
৬। শারীরিক ব্যথা এবং মাথা ঘোরাতে পারে।
৭। স্মরণশক্তির কমে যেতে পারে।
৮। মনোযোগ কমে যেতে পারে।
৯। শরীরের অন্যান্য অঙ্গ যেমন হজম প্রক্রিয়া এবং প্রস্রাব প্রক্রিয়ার সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
১০। যৌন ক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত স্নায়ুতন্ত্র দুর্বল হয়ে যেতে পারে অথবা ঠিকমতো কাজ না করার পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
১১। মাস্টারবেশন এর ফলে চোখে ঘোলা দেখতে পারেন।
১২। আবার কানে কমও শুনতে পারেন।
১৩। দীর্ঘদিন হস্তমৈথুন করার ফলে আপনার স্পামের শুক্রানুর পার্সেন্ট কমে যেতে পারে, ফলে আপনি বন্ধ্যাত্ব পুরুষ নামে অক্ষয়ত হতে পারেন।
১৪। একজন পুরুষের একবার বীর্যপাতের সাথে প্রায় ৪০ কোটিরও বেশি শুক্রাণু প্রবাহিত হয়। কিন্তু যখন কোন ব্যক্তি দীর্ঘদিন যাবত হস্তমৈথুনে অভ্যস্ত থাকে, তখন তার বীর্য থেকে শুক্রাণুর মাত্রা কমে যায় অধিক হারে। কমে গিয়ে মাত্র ২ কোটি শুক্রাণু প্রবাহিত হয় , যে শুক্রাণ থেকে বাবা হবার সম্ভাবনা হারিয়ে ফেলে একজন পুরুষ।
আরো পড়ুনঃ ব্রণ থেকে দ্রুত মুক্তির উপায়
হস্তমৈথুন ছাড়ার কার্যকরী উপায়
১। হস্তমৈথুন আপনি তখনই করেন যখন বেশিরভাগ সময় একা থাকেন। সুতরাং যদি আপনি মন থেকে চান যে আমি হস্তমৈথুন একেবারে ছেড়ে দেব তাহলে আপনি একা থাকা নিয়ন্ত্রণ করবেন। কারণ একা থাকলে শয়তান আপনাকে কুমন্ত্রণা দিয়ে সহজেই ফাঁদে ফেলতে পারে।
২। যতটা সম্ভব নিজেকে কাজের মাধ্যমে ব্যস্ত রাখুন। যেকোনো কাজ হতে পারে যেমন খেলাধুলা কৃষিকাজ ,বাড়ির কাজ, বা ঘুরতে যাওয়া ইত্যাদি। এর ফলে আপনার মাথায় হস্তমৈথুনের চিন্তা আসবে না বললেই চলে।
৩। যখন আপনার কোন কাজ থাকবে না তখন আজেবাজে চিন্তা না করে গেমস খেলতে পারেন , অথবা বই পড়তে পারেন। অথবা পরিবারের সাথে সময় দিতে পারেন। এর ফলে আপনার মাথায় বাজে চিন্তা আশা থেকে বিরত রাখবে।
৪। কোন সময় আপনি বেশি হস্তমৈথুন করেন সেই সময়টা মার্ক করুন। সেই সময় আসার পর যদি আপনার হস্তমৈথুনের ইচ্ছা জাগে তবে তৎক্ষণাৎ কোন কাজে লেগে পড়ুন। সেটা ব্যায়াম হতে পারে বাড়ির কোন কাজ হতে পারে । যে কাজ করলে আপনি দ্রুত ক্লান্ত হবেন সেই কাজ করুন । এবং ক্লান্ত না হওয়া পর্যন্ত কাজ বা ব্যায়াম চালিয়ে যেতে থাকুন।
৫। বেশিরভাগ সময় বাথরুমে গেলে হস্তমৈথুনের ইচ্ছে জাগে। যদি এমনটা ঘটে তবে ঠান্ডা পানি ব্যবহার করুন । যত দ্রুত সম্ভব বাথরুম পরিত্যাগ করুন। কারণ বাথরুমে দুষ্ট শয়তান বা জ্বীন থাকে , যারা আপনাকে প্রতিনিয়তই কুমন্ত্রণা দিতে থাকে।
৬। ধৈর্য ধরতে হবে, কারণ হস্তমৈথুন এমন একটি বদ অভ্যাস যেখান থেকে সহজেই বের হয়ে আসতে পারবেন না। তবে একাগ্রতা থাকলে অবশ্যই এই নেশা থেকে আস্তে আস্তে বের হয়ে আসতে পারবেন।
৭। সকল ধরনের সেক্সচুয়াল সাইট এড়িয়ে চলবেন। যদি পারেন ফোনের ব্রাউজারগুলো Uninstall করে দিন।
আরো পড়ুনঃ চুল পড়া বন্ধ করার ১০০ পার্সেন্ট কার্যকারী উপায়
৮। বন্ধু বান্ধবদের সাথে কম সময় দিন এবং পরিবারের সাথে বেশি সময় পার করুন।
৯। আপনি একটা টার্গেট ফিলাপ করতে পারেন যেমন প্রথম ১-২ সপ্তাহ হস্তমৈথুন করবেন না যদি ১-২ সপ্তাহ আটকে রাখতে পারেন তাহলে আস্তে আস্তে সময় বাড়াবেন। এরকমভাবে ১ থেকে ২ মাস ৩ থেকে ৪ মাস ৫ থেকে ৬ মাস এই ভাবে একেবারে ছেড়ে দিবেন।
১০। গার্লফ্রেন্ডের সাথে ফোন সেক্স করা একেবারে বন্ধ করে দিন । যদি পারেন গার্লফ্রেন্ডকেই তালাক দিন। জীবন সুন্দর হবে, সুন্দর একটি বউ পাবেন এবং বাচ্চার বাবা হিসেবে নিজেকে নিশ্চিত করতে পারবেন।
১১। খারাপ চিন্তা ধারা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। এবং সুন্দর জীবন উপভোগ করুন। হস্তমৈথুন নামক যৌন বিকৃতির মরণঘাতক থেকে সব সময় দূরে থাকুন ।
মহান আল্লাহতালা আপনাকে সব সময় দেখছেন এটা মনে রাখবেন । আল্লাহকে সবসময় ভয় করুন , রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়া সাল্লাম বলছেন :-
👉যে ব্যক্তি তার মুখের হেফাজত করবে এবং দুই পায়ের মধ্যবর্তী অর্থাৎ লজ্জাস্থান হেফাজত করার নিশ্চয়তা দেবে আমি তার বেহেস্তের নিশ্চয়তা দিব।
(হাদিস সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
আরো পড়ুনঃ হার্ট অ্যাটাক মানুষ কেন করে ! হার্ট এটাক থেকে বেঁচে থাকার উপায়
হস্তমৈথুন এবং অশ্লীল কাজ থেকে বেঁচে থাকার দোয়া ও আমল
হাদিসে বর্ণিত দোয়াটির নিয়মিত আমলের ফলে দুনিয়ার সব নিকৃষ্ট কাজ দূর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ
যেমন পর্নোগ্রাফি, চারিত্রিক কামনা বাসনা, পরনারীর প্রতি কুদৃষ্টি, অশ্লীলতা সহ বিভিন্ন অপকর্ম থেকে দূরে থাকা যাবে। উল্লেখিত দোয়াটি নামাজে সিজদায় বেশি বেশি পড়াই সর্বোত্তম ।
হযরত জিয়াদ ইবনে ইলাকা রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার চাচা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الأَخْلاَقِ وَالأَعْمَالِ وَالأَهْوَاءِ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন মুনকরাতিল আখলাক্বি ওয়াল আ’মালি ওয়াল আহওয়ায়ী ।
অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি তোমার কাছে খারাপ চরিত্র, অন্যায় কাজ ও কু প্রবৃত্তির অনিষ্ঠতা থেকে আশ্রয় চাই। (তিরমিজি)
عُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ سَمْعِي وَمِنْ شَرِّ بَصَرِي وَمِنْ شَرِّ لِسَانِي وَمِنْ شَرِّ قَلْبِي وَمِنْ شَرِّ مَنِيِّي
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন শাররি সাময়ি, ওয়া মিন বাচারি ওয়া মিন লিসানি ওয়া মিন শাররি ক্বালবি ওয়া মিন শাররি মানিয়্যি।
হস্তমৈথুন থেকে বাঁচার ইসলামিক উপায়
বাংলাদেশে আমরা প্রায় ৯৫ % মুসলমান বসবাস করি। আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই ইসলামের জ্ঞান একটু হলেও আছে। আমরা জানি কোনটা খারাপ (গুনাহের) কাজ এবং কোনটা ভালো (নেকির) কাজ। এবং আমরা এটাও জানি নিঃসন্দেহে হস্তমৈথুন একটি জঘন্য গুনাহের কাজ। যেটা আমরা জেনেও হস্তমৈথুন করতে পিছপা হই না। আমরা জানি যে আল্লাহ আমাকে দেখছেন এরপরেও সাবধান হই না। কারণ আল্লাহর ওপরে আমাদের ভয় নেই বললেই চলে। আল্লাহ বলেছেন তোমরা ভালো কাজ করলে তোমাদের জন্য আমি উপহার স্বরুপ জান্নাত রেখেছি। এবং যদি অপকর্ম করো তবে আমি তোমাদের জন্য জাহান্নামের লিলিহান অগ্নি বিশিষ্ট কূপ রেখেছি। সুতরাং নিঃসন্দেহে আমরা গুনাহের কাজ করছি । হস্তমৈথুনের গুনাহ থেকে আমাদের বাঁচতে হলে প্রথমে আল্লাহকে ভয় করতে হবে । তার দেওয়া বিধি-বিধানগুলো মেনে চলতে হবে। সব সময় তিনি আমাকে দেখছেন এই চিন্তা ধারণা মনে রাখতে হবে। বেশি বেশি নামাজ পড়তে হবে এবং সিজদায় পড়ে আল্লাহর কাছে নিজের পাপ কাজের জন্য পানাহ (মাফ) চাইতে হবে। এবং বেশি বেশি নিজের জন্য দোয়া করতে হবে আল্লাহ যেন সকল প্রকার গুনাহের কাছ থেকে দূরে রাখেন।
কুরআনে বর্ণিত হস্তমৈথুনের শাস্তি
যারা কৃত্রিম উপায়ে নিজের শরীর থেকে বীর্যপাত ঘটায় অর্থাৎ হস্তমৈথুন করে তাদের শাস্তির ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলছেন, কিয়ামতের দিন ওই সকল ব্যক্তিদের হাতের আঙ্গুলের ঘিরা গুলো গর্ভবতী অবস্থায় থাকবে তাদের আঙ্গুলের গিরাগুলো কলা গাছের ন্যায় ফুলে থাকবে এবং তাদের আঙ্গুলের গিরা থেকে ফেটে ফেটে বাচ্চা বের হবে। এবং হাতের গিরা আপনার বিরুদ্ধে আল্লাহ তাআলার কাছে বলবে এই সেই ব্যক্তি যে আমার দ্বারা তার শরীরের বীর্যপাত ঘটিয়ে অসংখ্য শুক্রাণুকে হত্যা করেছে। আজ তার শাস্তির পালা। একবার চিন্তা করে দেখুন আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্য কত ভয়ংকর শাস্তির হুঁশিয়ারি করেছেন। এরপরেও আমরা সাবধান হই না। আল্লাহকে ভয় করুন কেয়ামতের কথা চিন্তা করুন স্মরণ করুন এবং হস্তমৈথুন থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখুন সকল গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে তওবা করুন।
আরো পড়ুনঃ যেসব রোগের ঝুঁকি কমাবে আলীভ অয়েল