একজন নতুন ড্রাইভার এর ক্ষেত্রে কি কি অভিজ্ঞতা প্রয়োজন বা কি করলে একজন দক্ষ ড্রাইভার হিসেবে পরিচিত লাভ করবেন এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তাহলে চলুন জেনে নেই।
বাংলাদেশের বর্তমানে প্রচুর গাড়ি রয়েছে, বিআরটিএ এর হিসেব মতে নিবন্ধনকৃত বৈধ যানবাহন রয়েছে প্রায় ৩৫ লাখের বেশি এবং বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স ধারি রয়েছে ১৮ লাখ ৭০ হাজারের মতো। তাহলে বুঝতে পারছেন যে বাংলাদেশে ড্রাইভার এর প্রয়োজনীয়তা কেমন রয়েছে। বাংলাদেশে অনেক কর্ম রয়েছে যেগুলো শিখে অনেকেই কাজে লাগাতে পারে না । তাকে দিনের পর দিন ঘুরতে হয় খুঁজতে হয় এরপরেও কাজ মিলে না। কিন্তু ড্রাইভিং পেশা এমন একটি পেশা, যে পেশা আপনাকে বসে থাকার সুযোগ দেবেনা। কোথাও না কোথাও আপনার চাকরি হয়ে যাবে। কিন্তু এর আগে আপনাকে একজন দক্ষ ড্রাইভার হিসেবে নিজেকে নিশ্চিত করতে হবে। তবেই আপনি একজন ড্রাইভার হিসেবে নিয়োগ পাবেন।
যারা নতুন ড্রাইভিং শিখছেন বা শিখবেন বলে ভাবছেন তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য তুলে ধরলাম।
ড্রাইভিং সম্পর্কে বেসিক ধারণা
আপনি ড্রাইভিং শেখার আগে বেসিক বিষয়গুলো ভালোভাবে খেয়াল রাখবেন। গাড়ি চালানো শুরু করার আগেই আপনাকে গাড়ির সম্পর্কে জানতে হবে। যেমন গাড়ির এক্সেলেটর , ব্রেক, ক্লাস, স্টিয়ারিং এই চারটি খুব গুরুত্বপূর্ণ । ইঞ্জিনের পার্স , গাড়ির স্টিয়ারিং এর ব্যাপারে জানতে হবে কতটুকু ডানে বামে কাটলে কতটুকু যেতে পারে। গাড়ির গিয়ার সম্পর্কেও ধারণা রাখতে হবে। কত স্পিডে কোন গিয়ারটি লাগাবেন। গাড়ির চাকার হাওয়ার প্রেসার সম্পর্কে জানতে হবে। হ্যান্ড ব্রেক সম্পর্কে জানতে হবে। গাড়ির ইঞ্জিনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্স যেমন প্লাগ, ডায়নামা, বাটারফ্লাই, রেডিওটোর, সকেট, ৪ টা ইঞ্জিন কয়েল বা ফিউজ বলা হয়, এসি ফিল্টার, এয়ার ফিল্টার, ইত্যাদি এই পার্স গুলোর ব্যাপারে সাধারণ ধারণা রাখতে হবে। মূলত রাস্তায় চলতে গেলে এই পার্টসগুলোর সমস্যাই বেশিরভাগ সময় দেখা দেয়। সুতরাং আপনি যদি না জানেন কোন পার্সের তৎক্ষণাৎ কাজ কি ? তবে রাস্তার মাঝখানে আটকে যেতে পারেন। কাজেই এই পার্সগুলোর ব্যাপারে পুরোপুরি ধারণা রাখতে হবে। এই ধারণা গুলো না থাকলে আপনি মাঝ রাস্তায় আটকে জেতে পারেন।
ড্রাইভিং শিখতে কি প্রয়োজন
ড্রাইভিং শিখতে মূলত কোন যোগ্যতার প্রয়োজন হয় না। প্রয়োজন হয় শুধু নিজের ইচ্ছে শক্তি, আত্মবিশ্বাস, সাহস এবং মনোবল, অনেক ড্রাইভার আছে যারা ড্রাইভিং শেখার পরে শুধুমাত্র ভয়ের কারণে হাইওয়েতে ড্রাইভ করতে পারে না। আপনার যদি আত্মবিশ্বাস না থাকে তবে এই কাজ আপনার জন্য না। অবশ্যই আপনার সাহস থাকতে হবে এবং আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে যে আমি বাংলাদেশের এবং পৃথিবীর সব জায়গাতে একজন দক্ষ ড্রাইভার হিসেবে নিজেকে নিশ্চিত করতে পারবো। তবেই আপনি একজন দক্ষ ড্রাইভার হতে পারবেন।
বর্তমানে বাংলাদেশে ম্যানুয়াল গাড়ি নেই বললে চলে। তবে আপনি একজন ড্রাইভার হিসেবে ম্যানুয়াল গাড়িতে চালানো শিখাটাই আপনার জন্য বেটার হবে। কারণ ম্যানুয়াল গাড়িতে আপনি যে সকল বিষয় জানতে পারবেন অটো গাড়িতে সেই বিষয়গুলো জানতে পারবেন না। কাজেই আপনি ড্রাইভার হিসেবে নিজেকে নিশ্চিত করার আগে সকল গাড়ির ব্যাপারে আপনার পুরো ধারণা রাখতে হবে তবেই আপনি ড্রাইভার হিসেবে বিবেচিত হবেন।
প্রথম অবস্থায় যে কাজগুলো করবেন↴
প্রথমে ড্রাইভিং সিটে বসুন এবং সিট বেল্ট লাগিয়ে নিন।
তারপর গাড়ি স্টার্ট করুন এবং এক্সিলেটরে হালকা পারা দিন।
গাড়ি সামনে আগানোর আগে প্রথমে ক্লাস চেপে ধরুন।
এরপর এক নম্বর গিয়ারে ফেলুন।
আপনাদের সুবিধার্থে আমি গিয়ার বক্সের ছবি নিচে তুলে ধরলাম।
বাংলাদেশে এই দুই ধরনেরই ম্যানুয়াল গিয়ারের গাড়ি রয়েছে
এরপর আস্তে আস্তে ক্লাস ছাড়ুন এবং এক্সিলেটরে চাপ দিন।
গাড়ি চলতে শুরু করলে ক্লাস চেপে ধরে দ্বিতীয় গেয়ারে শিফট করুন।
গাড়ির স্টিয়ারিং সোজা রাখুন প্রয়োজন না হলে স্টেয়ারিং এদিক ওদিক কাটবেন না।
হার্ডব্রেক করবেন না,
প্রথমে ব্রেক করে গাড়ির গতি কমিয়ে নিন।
গতি কমে গেলে ক্লাস চেপে ধরুন এবং গিয়ার নিউট্রল করুন।
এবং পুনরায় আবার শুরু থেকে করুন।
ঠিক এইভাবে আপনি কয়েকদিন প্র্যাকটিস করার মাধ্যমে ম্যানুয়াল গিয়ারের গাড়ি চালাতে সক্ষম হবেন আশা করছি। তবে আপনাকে প্রতিনিয়তই প্র্যাকটিস করতে হবে। আপনি যদি অবহেলা করেন তবে যা শিখেছেন সেগুলো ভুলে যাবেন কাজেই অবহেলা করা যাবে না নিয়মিত প্র্যাকটিস করতে থাকুন।
অটো গাড়ির গাড়ি কিভাবে চালাবেন
বর্তমানে বাংলাদেশে ম্যানুয়াল গাড়ি নেই বললে চলে। লেটেস্ট মডেলের যত গাড়ি বাংলাদেশে এসেছে এর সবগুলোই অটো গিয়ারের গাড়ি। অটো গিয়ারের গাড়িতে তেমন কোনই কাজ নেই। ম্যানুয়ালে যেমন আমরা শিখলাম একের পর এক গিয়ার শিফট করতে হয় , ক্লাস করতে হয় , গিয়ার পুনরায় নিউট্রাল করতে হয় , আবার চলতে শুরু করলে আবার গিয়ার লাগাতে হয়। অনেক ঝামেলার বিষয় তাই না…? অটো গিয়ারে এর কোনটাই করতে হয় না। অটোগিয়ার এর কয়েকটি অপশন রয়েছে এর মধ্যে একটি হলো =D ডি অপশনে গিয়ার শিফট করে আপনি পুরো বাংলাদেশ এক গিয়ারের ওপরেই ড্রাইভ করতে পারবেন। আপনাদের সুবিধার্থে আমি অটোগিয়ারের ছবি নিচে দিয়ে রাখছি।
আপনারা দেখতে পাচ্ছেন অটো গিয়ারের কয়েকটি অপশন রয়েছে। এই প্রত্যেকটা অপশনের আলাদা আলাদা কাজও রয়েছে তাহলে চলুন কাজগুলো জেনে নিই।
সর্বপ্রথম যেটি রয়েছে সেটি হল=P= অর্থাৎ পারকিং।
আপনি যখন কোন জায়গাতে গাড়ি রাখবেন বা পার্কিং করবেন তখন আপনাকে পি গিয়ারে শিফট করে গাড়ি রাখতে হবে।
দ্বিতীয় নাম্বারে যেটি রয়েছে সেটি হল =R= অর্থাৎ রেয়ার বা ব্যাক গিয়ার।
আপনার গাড়ি ঘোরানোর জন্য পিছনে দেওয়ার প্রয়োজন হয়। যখন আপনার গাড়ি ঘোরানোর প্রয়োজন হবে, পেছনে নেওয়ার জন্য R গিয়ারে শিফট করতে হবে।
তৃতীয় নাম্বারে যেটি রয়েছে সেটি হল =N= অর্থাৎ নিউট্রল।
আপনি যখন জ্যামে পড়বেন বা ধাক্কা দিয়ে গাড়িকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবেন তখন =N=গিয়ারে শিপট করতে হবে ।
চতুর্থ নাম্বারে যেটি রয়েছে সেটি হলো=D=অর্থাৎ ড্রাইভ।
আপনার যখন সামনের দিকে যাওয়ার প্রয়োজন হবে তখন =D= গিয়ারে শিপ্ট করতে হবে এবং একি গিয়ারে ড্রাইভ করতে হবে । আলাদা কোনো গিয়ারে শিপট করা যাবে না।
বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মডেলের গাড়িতে অনেক ধরনের গিয়ার থেকে থাকে।
যেমন =D এর পাশে =D+
অথবা =D-S থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে S এর কাজ কি ?
S এর কাজ হল, যখন আপনি কোন গাড়িকে ওভারটেকিং করবেন, ঠিক সেই মুহূর্তে যদি D গিয়ারে থাকা অবস্থায় ওভারটেকিং করা আশঙ্কাজনক মনে হয়, ততক্ষণাত S গিয়ারে শিপট করুন। S গিয়ারের শিফট করলে আপনার গাড়ির স্পিড দ্বিগুণ হয়ে আপনাকে ওভারটেক করতে সাহায্য করবে।
পঞ্চম নাম্বারে যেটি রয়েছে বা থাকে সেটি হল=S বা B বা L বা অন্য আরো কিছু।
এই সবগুলো একেবারে নিচেই থাকে। এই সব গুলোর নাম আলাদা আলাদা হলেও কাজ কিন্তু একই।
এই গিয়ার গুলো মূলত কাজ করে এক নাম্বার গিয়ার হিসেবে। যখন আপনাকে পাহাড়ে উঠতে হয়, বা কোন গর্তে চাকা ফেসে গেলে, বা কাঁদার মধ্যে আটকে গেলে, অথবা যে কোন সময় গাড়ির অতিরিক্ত শক্তির প্রয়োজন হলে এই গিয়ার গুলো ব্যবহার করতে হবে।
গাড়ির হ্যান্ড ব্রেক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এটি সব সময় ব্যবহার করা যায় না, কিছু কিছু সময় হ্যান্ড ব্রেক ব্যবহার করতে হয়। সর্ব অবস্থায় গাড়ি যখন পার্কিংয়ে রাখা হয় তখন অবশ্যই হ্যান্ড ব্রেক করে রাখবেন। পাহাড়ের ঢালু রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে হ্যান্ডব্রেক লাগিয়ে ধীরে ধীরে নিচে নামতে পারেন তবে অবশ্যই গাড়ি গিয়ারে রাখা যাবে না। যদি কখনো গাড়ি ব্রেক ফেল করে তবে হ্যান্ড ব্রেকের দ্বারা গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করবেন । জ্যামে আটকে থাকলে হ্যান্ড ব্রেক ব্যাবহার করতে হয়।
শেষ কথা
প্রিয় বন্ধুগণ এতক্ষণ যাবৎ আমরা একজন দক্ষ ড্রাইভার হিসেবে কিভাবে নিজেকে নিশ্চিত করবেন এই ব্যাপারে জানলাম। এমন আরো অনেক তথ্য আমরা নিয়মিত পেজে প্রকাশ করে থাকো। প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে আমাদের পেজটি ভিজিট করুন । পোস্টটি পড়ে আপনাদের কেমন লেগেছে কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না । ধন্যবাদ