জলাতঙ্ক রোগ কি ? আমরা অনেকেই তা জানি না। আবার অনেকেই জলাতন রোগের নাম শুনলে ভয় পেয়ে থাকেন।ভয় পেলেও জলাতঙ্ক সম্পর্কে আমাদের সুস্পষ্ট ধারণা নেই বললেই চলে । তাই আজ আমরা জলাতঙ্ক কি, জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ এবং জলাতঙ্ক রোগের প্রতিকার, জলাতঙ্ক রোগের চিকিৎসা ও প্রতিরোধ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
জলাতঙ্ক রোগ একটি পশু ঘাতক রোগ ,যে রোগটি পশুর কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। এই ব্যাপারে আমরা যারা জানি না তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেল টি উপকারে আসবে। কেননা জলাতঙ্ক রোগ একটি ভয়ংকর রোগ। এই রোগের চিকিৎসা ঠিক সময়ে না করা হলে মৃত্যু অবধারিত। এমন কি চিকিৎসা করেও অনেক সময় রোগিকে বাচানো সম্ভব হয় না। তাহলে বুঝতেই পারছেন এই রোগের ব্যাপারে আমাদের কতটা সতর্কতা অবলম্ববন করা উচিত। তাহলে চলুন আর দেরি না করে জেনে নেই এই রোগের প্রতিকার চিকিৎসা ও প্রতিরোধ সম্পর্কে বিস্তারিত।
জলাতঙ্ক রোগ কাকে বলে
জলাতঙ্ক একটি রোগের নাম, মেডিক্যাল পরিভাষায় একে হাইড্রোফোবিয়া বলা হয়।জলাতঙ্ক একটি ভাইরাস জাতীয় জুনোটিক টাইপ রোগ। জুনোটিক টাইপ রোগ বলতে বুঝায় যে টাইপের রোগ গুলো প্রথমে প্রাণীদেহে হয় এবং পরে মানবদেহে ছড়িয়ে থাকে।
জলাতঙ্ক রোগটিও প্রথম প্রাণীদেহে হয়। এরপর ঐ প্রাণী যদি কোন মানুষকে কামড়ায় বা আচোড় দেয়, অথবা প্রাণীটির লালার সংস্পর্শে কোন মানুষ যদি অবস্থান করে সেই ক্ষেত্রে সেই মানুষটির জলাতঙ্ক রোগ হওয়ার সম্ভবনা সৃষ্টি হয়। কোন মানুষ যদি একবার জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়, সেক্ষেত্রে তার দ্বারা আরো মানুষের মধ্যে জলাতঙ্ক ছড়াতে পারে।
আরো পড়ুনঃ কিডনি ভালো রাখার উপায়-কিডনি সুস্থ রাখতে ঘরোয়া কিছু টিপস
এমনকি জলাতঙ্ক রোগ হলে রোগীর প্রচুর পরিমাণ পানির পিপাসা হয়। কিন্তু সে পানি পান করতে পারে না, পানি দেখলে এমনভাবে ভয় পায় যেন মনে হয় তাকে পানির বদলে বিষ পান করতে বলা হয়েছে। তাহলে বুঝতে পারলেন জলাতঙ্ক কাকে বলে এর বিস্তারিত। এবার আমরা জানবো জলাতঙ্ক রোগ বিস্তারের কারণ সম্পর্ক।
জলাতঙ্ক রোগ কিভাবে ছড়ায়
কোন কোন প্রাণীর কামড়ে জলাতঙ্ক রোগ ছড়ায়
- গৃহপালিত প্রাণীর মধ্যে
কুকুর,বিড়াল,গরুমহিষ,ছাগল,ভেড়া ইত্যাদি থেকে জলাতঙ্ক ছড়াতে পারে।
আরো পড়ুনঃ হার্ট অ্যাটাক মানুষ কেন করে হার্ট অ্যাটাক থেকে বেঁচে থাকার উপায়
- বন্য প্রাণীর মধ্যে
শেয়াল,বনবিড়াল,কাঠবিড়ালি,নেকড়ে,শূকুর,বানরইঁদুর,বাদুড়বেজি,চিকা,খরগোশ ইত্যাদি থেকেও জলাতঙ্ক ছড়াতে পারে।
জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ
জলাতঙ্ক রোগ কি জলাতঙ্ক রোগ কিভাবে হয় কোন কোন প্রাণীর মাধ্যমে ছড়ায় উপরে এই বিষয়গুলো আমরা বিস্তারিত জেনেছি। এখন আমাদের জানতে হবে জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ, কেননা রোগ কখন আমাদের শরীরে বাসা বাঁধে তা আমরা ভালোভাবে বুঝতে পারি না সেটা যে কোন রোগের ক্ষেত্রেই হতে পারে। আমাদের অবহেলার কারণে আস্তে আস্তে আমাদের শরীরে বিভিন্ন রোগ বৃদ্ধি পায় ফলে আমাদের চিকিৎসা করতে অনেক দেরি হয়ে যায়। ঠিক একই ভাবে জলাতঙ্ক রোগ আমাদের শরীরে বাসা বাঁধতে পারে যদি কোন প্রাণীর কামড় ও আঁচড়কে আপনি গুরুত্ব না দেন স্বাভাবিকভাবে নেন তবে আপনি আপনার বিপদ ডেকে আনতে পারেন। ফলে আমাদের জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ গুলো যদি জানা থাকে তবে আপনি সহজেই চিকিৎসা নিতে পারবেন। নিম্নে কিছু উল্লেখ্যযোগ্য লক্ষণ তুলে ধরা হল।
- মুখ দিয়ে অতিরিক্ত লালা নিঃসরণ হবে, শরীরে কাঁপুনি আসবে।
- শরীর নিস্তেজ হয়ে ঝিমুনি আসতে পারে।
- আক্রান্ত স্থানে অবশ লাগতে পারে ও অসাড়তা অনুভূত হতে পারে।
- শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ু দুর্বল হয়ে যাবার ফলে শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।
- ব্যক্তির পক্ষাঘাত হতে পারে।
- শেষের দিকে খিঁচুনি দেখা দিতে পারে।
- ক্ষুধামন্দা ও খাওয়াতে অরুচি।
- খাবার খেতে কষ্ট হয় ও খেতেও পারে না।
- কন্ঠস্বরের পরিবর্তন আসে এবং কর্কশ হয়ে যায়।
- আওয়াজ বিকৃত হয়ে যায়।
- মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়।
- অনেক সময় অন্যকে কামড় দেবার প্রবণতা কাজ করে।
- আক্রান্ত ব্যক্তির পানি পিপাসা খুব বেড়ে যায় তবে পানি খেতে পারেনা।
- অনেক সময় উন্মাদ হয়ে যায়।
- প্রাণীর কামড় বা আঁচড়ে আক্রান্ত হলে ক্ষতস্থানে চুলকানো।
- ২-৪ দিন ধরে জ্বর।
- মাথাব্যাথা ও মাংসপেশিতে ব্যাথা।
- পানিভীতি বা Hydrophobia যা এ রোগের অন্যতম একটি বড় লক্ষণ।
- ব্যক্তি উচ্চ শব্দ, বাতাস বা উজ্জ্বল আলো সহ্য করতে পারে না। আলো-বাতাসের সংস্পর্শে এলে আতঙ্ক বৃদ্ধি পায়।
- চেহারা ও ভাব-ভঙ্গিতে ও কথাবার্তায় অস্বাভাবিকতা থাকে।
- অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখায় সববিষয়ে।
জলাতঙ্ক রোগ নির্ণয়
এতক্ষণ যাবৎ আমরা জলাতঙ্ক রোগের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত জেনেছি এখন আমরা জানবো। কুকুর বিড়াল অথবা বন্যপ্রাণী কামড়ালে অথবা তাদের আচরে আক্রান্ত হলে আমরা কিভাবে এই জলাতঙ্ক রোগ নির্ণয় করব। তাহলে চলুন বিস্তারিত জেনে নেই।
যদি আপনি একটি বিপথগামী কুকুর বা বন্য প্রাণী দ্বারা আক্রান্ত হন তবে অবশ্যই নিম্নের বিষয় গুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তে এবং জানতে হবে। বুদ্ধিমানের কাজ হল যে প্রাণীর জলাতঙ্ক আছে এবং কোনো ব্যক্তি তার জীবন বাঁচাতে অবিলম্বে টিকা দেওয়া উচিত। তবে যদি বাড়িতে পোষা বিড়াল হয়ে থাকে এবং সাময়িক ভাবে আছড়াই তাহলে অবশ্যই বিড়ালকে সহ পশু চিকিৎসকের কাছে গিয়ে বিড়ালের কোন র্যাবিট বা লিসা ভাইরাস নামক কোন রোগ আছে কিনা তা নিশ্চিত করা। যদি এই ধরনের কোন ভাইরাস না থেকে থাকে তবে ভ্যাকসিন নেওয়া জরুরি না।
আরো পড়ুনঃ ব্রণ থেকে দ্রুত মুক্তির উপায়-কোন খাবার খেলে ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে
জলাতঙ্ক আক্রান্ত প্রাণীর আক্রমণের পর অবশ্যই খেয়াল করুন আপনি কতটা আহত হয়েছেন কারণ এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিড়ালের আঁচড় চামড়ার উপরিভাগে থাকে বিধায় রক্ত গড়িয়ে পড়ে না আবার গভীরে ক্ষত সৃষ্টি করে। তবে কুকুরে কামড়ালে রক্ত বের হয়। শুরুতেই আক্রান্ত স্থানে ক্ষত ও রক্তপাতের তীব্রতা খেয়াল করতে হবে ও প্রাথমিক অবস্থায় ক্ষতস্থান চেপে ধরতে হবে যেনো দ্রুত রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়।
আক্রান্ত প্রাণী আঁচড় বা কামড় দিলে টিউবওয়েলের পানি দিয়ে ন্যূনতম ২০/২৫ মিনিট ধরে ক্ষতস্থান পরিষ্কার করতে হবে এতে ৭০-৮০ শতাংশ জীবাণু মারা যায়। র্যাবিস ভাইরাস প্রতিরোধে সাবান পানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই সম্ভব হলে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবানও ব্যবহার করতে হবে কারণ এটি ভাইরাস সহ ক্ষতে অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণু ধ্বংস করতে সাহায্য করবে।
জলাতঙ্ক রোগের চিকিৎসা
জলাতঙ্ক রোগে সতর্কতা
- সেবাদানকারীকে টিকা দিতে হবে।
- লক্ষণ দেখা দেবার আগেই চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।
- আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির মরদেহ মাটিতে পুঁতে দিতে হবে।
- আক্রান্ত ব্যক্তির প্লেটে খাবার খাওয়া যাবে না।