মানুষের টেনশনের ভয়াবহতা কেমন
প্রথমেই বলে নিচ্ছি মানসিক টেনশন একটি ভয়াবহ রূপ। আর এখান থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মানসিক টেনশন দূর করার উপায় সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। কিন্তু তার আগে মানসিক টেনশন এর ভয়াবহতা সম্পর্কে জেনে নিন। মানসিক টেনশন এমন একটি বিষয় যেটি মানুষকে একবার গ্রাস করলে সেখান থেকে পরিত্রাণ পাওয়া খুবই মুশকিল। এর কারণে মানুষ দিনে দিনে মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়ে।
মানসিক টেনশন যদি অতিরিক্ত হয় সে ক্ষেত্রে আপনার স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেতে পারে। যার কারনে আপনি আপনার সুন্দর মুহূর্তের স্মৃতি গুলো ভুলে যেতে পারেন এবং জীবনে নেমে আসতে পারে অনেক বড় বিপর্যয়। এছাড়া ব্রেইন ক্যান্সার এবং স্ট্রোকের মত ক্ষতিকর ও জটিল রোগগুলো বাসা বাঁধতে পারে আপনার মস্তিষ্কে। তাই মানসিক টেনশন দূর করার উপায় গুলো জানা অত্যন্ত জরুরী।
মানসিক দুশ্চিন্তার ফলে কি কি ক্ষতি হয়ে থাকে
দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির ঔষধ সম্পর্কে যেহেতু আলোচনা করেছি তাই আমাদের অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার ফলে কোন ধরনের কতগুলো ক্ষতি হয়ে থাকে এই বিষয় সম্পর্কে একটা ধারণা আমাদের রাখতে হবে।আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা সামান্য বিষয় নিয়ে অনেক বেশি চিন্তা করে থাকে।কারণে অকারণে ফলে আমাদের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ক্ষতি দেখা যায় যা আমরা নিজেরাও জানিনা ।
যেমনঃ
- পরিমান মত ঘুম না হওয়া
- রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া
- হরমোন ব্যালেন্স নষ্ট হওয়া
- হৃদরোগ হওয়া
- বদমেজাজি হয়ে যাওয়া
ঘুমের সমস্যা হওয়া — যদি আমরা বেশির ভাগ সময় দুশ্চিন্তায় পড়ে থাকি তাহলে প্রথমে আমাদের যে ক্ষতি টা হয়ে থাকে সেটা পরিমান মত ঘুম না হওয়া । একজন সুস্থ মানুষের কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমানো জরুরী । কিন্তু অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার ফলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে , ফলে শারিরিক নানা সমস্যার সৃষ্টি হয় ।
আরো পড়ুনঃ ব্রণ থেকে দ্রুত মুক্তি পাবার উপায়। কি কি খাবার খেলে ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে
রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া– অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করলে যে সমস্যাটি বেশি দেখা যায় সেটি হল উচ্চ রক্তচাপ। উচ্চ রক্তচাপ শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বয়ে আনতে পারে। যেমন উচ্চ রক্তচাপের ফলে মানুষের কমন যে বিপদ টি ঘটে সেটি হল ব্রেন স্ট্রোক । এমনিতে আমাদের রক্তচাপ সব সময় নিয়ন্ত্রণে থাকে কিন্তু আমরা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করি যার ফলে আমাদের রক্তচাপ অনেকটাই বেড়ে যায়।
হরমোনাল ব্যালেন্স নষ্ট হয়ে যাওয়া–আমাদের শরীরে হরমোন ব্যালেন্স অবস্থায় থাকে। তবে আমরা যদি অতিরিক্ত পরিমাণে দুশ্চিন্তা করি তাহলে এই ব্যালেন্স অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যেতে পারে। এই সমস্যা হলে শারিরিক বিভিন্ন ক্ষতি হয়ে থাকে ।
হৃদরোগ হওয়া–অতিরিক্ত পরিমাণে দুশ্চিন্তা করলে মানুষের হার্টের সমস্যা হয়ে থাকে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় যে যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে তাদের এই সমস্যা হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করলে, অর্থাৎ হৃদরোগ হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।
বদমেজাজি হয়ে যাওয়া–দুশ্চিন্তা করার ফলে আপনার শারীরিক হরমোনাল ডিজব্যালেন্স হয়ে যায় যার । ফলে আপনার ছোটখাটো বিষয়ে মাথা গরম হয়ে যায় এটা খুবই অস্বাভাবিক। উচ্চ রক্তচাপ এবং হরমোনাল ডিস ব্যালেন্সের কারণে বদমেজাজি হয়ে যান। ফলে শারীরিক নানা ধরনের ক্ষতি দেখা দেয় ।
মানসিক টেনশন কি মৃত্যু ঝুঁকির কারণ
হ্যাঁ! প্রথমেই আমি স্বীকার করছি যে মানসিক টেনশন মানুষের মৃত্যু ঝুঁকির কারণ হতে পারে। তাই অতিরিক্ত চিন্তা টেনশন আমাদের মাথায় নেওয়া উচিত নয়। আমরা যখন অতিরিক্ত টেনশন করি তখন আমাদের মাথায় অতিরিক্ত রক্ত চলাচল শুরু হয়। যার কারণে আমরা খুব ব্যথা অনুভব করি। আর এই অতিরিক্ত রক্ত চলাচল করার কারণে অনেক সময় রক্ত নালিকা ফেটে যেতে পারে।
আর মাথার মধ্যে রক্তনালিকা ফেটে যদি রক্ত জমাট বেঁধে যায় তাহলে সেই মানুষকে আর বাঁচানো সম্ভব হবে না। তাই আমরা সবসময় চেষ্টা করব অতিরিক্ত মানসিক টেনশন থেকে দূরে থাকার এবং কোনভাবেই মানসিক টেনশন মাথার মধ্যে নেওয়া যাবে না। তাহলে আপনি আপনার প্রাণনাশ থেকে রক্ষা হতে পারেন।
মানসিক টেনশন দূর করার উপায়
এখন আমি মানসিক টেনশন দূর করার উপায় গুলো নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব। তবে সব চেয়ে বেশি কিছু জনপ্রিয় মানসিক টেনশন থেকে মুক্তির উপায় রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম কিছু উপায় নিচে দেওয়া হল।
- মানসিক টেনশন দূর করার উপায় হিসেবে সর্বপ্রথম কার্যকরী পন্থা হচ্ছে পরিবার ও বন্ধুদের সাথে গল্প করা।
- নিজেকে মানসিকভাবে শক্ত করে তুলুন তাহলে আপনি মানসিক টেনশন থেকে দূরে থাকতে পারবেন।
- যেকোনো বিষয়ে অল্পতেই ঘাবড়ে যাবেন না। এতে করে আপনার মস্তিষ্কে হঠাৎ করে চাপ অনুভূত হতে পারে যার কারণে আপনি মানসিক টেনশনের দিকে ঢলে পড়তে পারেন।
- আপনার খারাপ সময় গুলিতে প্রকৃতির কাছে থাকার চেষ্টা করুন যার কারণে প্রকৃতির ফ্রেশ বাতাসআপনাকে মুগ্ধ করবে এবং মানসিক টেনশন থেকেকিছুটা দূরে রাখবে।
- জীবনে যেকোনো সিদ্ধান্ত হুটহাট করে নিবেন না সে ক্ষেত্রে সেই সিদ্ধান্ত যদি ভুল হয় তবে আপনি বিচলিত হয়ে যেতে পারেন যার কারণে মানসিক টেনশন আপনাকে গ্রাস করবে।
- আপনি যখন মানসিক টেনশন অনুভূত করবেন তখন আপনার পছন্দের কাজগুলোতে লিপ্ত থাকুন। যার কারণে আপনি স্বস্তি পেতে পারেন।
মানসিক দুশ্চিন্তা দূর করার আরো কিছু উপায়
- টেনশন হলে কোথাও ঘুরতে যাওয়া
- সবার সাথে কথা বলা
- হাসার চেষ্টা করা
- নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখা
- সকালে ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি ওঠা
- খাদ্য তালিকা ঠিক রাখা
- প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়া
- মেডিটেশন করা
- সকালবেলা হাটাহাটি করা
মানসিক টেনশন এর সূত্রপাত হয় কিভাবে
আমাদের জানা জরুরী যে মানসিক টেনশনের সূত্রপাত হয় কিভাবে। এ বিষয়ে অনেকেই সাধারণভাবে একটু ভাবলেই নিজেরাই বুঝতে পারবেন যে কেন তাদের মাথায় মানসিক টেনশন এর আবির্ভূত হয়। মানসিক টেনশন বিভিন্ন কারণে হয় যেমন সহজে রেগে যাওয়া, কিংবা মন খারাপ ও উৎসাহ উদ্দীপনা কমে যাওয়া, বিচারবুদ্ধি লোপ পাওয়া অথবা কারো সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়া।
আমরা অনেকেই আছি যে হঠাৎ করেই নিজের উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি। কিংবা আমরা কোন কাজে মনোযোগ বসাতে পারি না সে ক্ষেত্রে আমরা হতাশ হয়ে পড়ি। যার কারনে আমাদের স্নায়ুকে মানসিক চিন্তা টেনশন গ্রাস করতে থাকে। সাধারণত এভাবেই মানসিক টেনশন এর সূত্রপাত ঘটে আমাদের মাথায়। আশা করছি মানসিক টেনশন এর সূত্রপাত এর কারণ সম্পর্কে আপনি বুঝতে পারলেন।
মানসিক টেনশন মানুষের মস্তিষ্ককে কতটা দুর্বল করে
মানসিক টেনশন মানুষের মস্তিষ্ককে কতটা দুর্বল করতে পারে আপনি কি জানেন? মানসিক টেনশন এর ভয়াবহতা সম্পর্কে জেনে নিন। যেহেতু আমরা ইতোমধ্যে জেনে গিয়েছি মানসিক টেনশন এর ভয়াবহতা কত এবং কেমন হতে পারে। তাই নতুন করে আলোচনা না করলেও বোঝা যায় যে আমাদের মস্তিষ্ককে কতটা দুর্বল করতে পারে এই মানসিক টেনশন। তারপরেও কিছু ধারনা দিই।
অতিরিক্ত মানসিক টেনশন করার ফলে ধীরে ধীরে আমাদের মস্তিষ্কের থাকা নিউরন গুলো অকেজো হয়ে যায়। এবং দিনে দিনে আমাদের স্নায়ুবিক উত্তেজনা কমতে থাকে। যার প্রভাবে আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবো না যদি অতিরিক্ত মানসিক চিন্তা বা টেনশন এ থাকি। এবং এটি আমাদের মস্তিষ্ককে ব্যাপকভাবে ক্ষতি সাধন করে। আপনি এই পোস্টটি করার মাধ্যমে মানসিক টেনশন সম্পর্কে ও মানসিক টেনশন দূর করার উপায় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। উপকৃত হয়ে থাকলে এই সম্পর্কে আপনাদের বন্ধুদের জানিয়ে দিন ধন্যবাদ।
লেখকের শেষ মন্তব্য
প্রিয় বন্ধুগণ এতক্ষণ আমরা মানসিক টেনশন থেকে মুক্তির উপায় এবং মানসিক চাপের কারণে ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি । আপনি যদি মানসিক চাপের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন তবে এই আর্টিকেলটি পড়ে অবশ্যই আপনার উপকার হয়েছে আশা করছি । যদি আর্টিকেলটি পড়ে আপনি উপকার পেয়ে থাকেন তবে অবশ্যই একটি আপনার আশেপাশের বন্ধু বান্ধবদের সাথে শেয়ার করবেন। এবং আমাদের পেজটি ভিজিট করুন কেননা আমরা নিয়মিত নতুন নতুন তথ্য গুলো আর্টিকেল এই পেজে প্রকাশ করে থাকি ।
এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ।