গরমে বাচ্চার যত্ন – অতিরিক্ত তাপমাত্রায় শিশুর হিট স্ট্রোকের ঝুকি কমাতে করণীয়

এই গরমে যাদের ঘরে ছোট্ট বাচ্চা রয়েছে তাদের চিন্তার শেষ নেই, কেননা অতিরিক্ত গরমে বাচ্চারা অতিষ্ঠ হয়ে যায়। উগ্র মেজাজি এবং খিটখিটে মেজাজের হয়ে যায় ফলে বাবা মায়ের চিন্তার শেষ নেই। এই গরম থেকে বাচ্চাকে রক্ষা করতে আমাদের অবশ্যই কিছু নিয়ম মেনে  চলতে হবে। অনেকেই আমরা সেই নিয়ম না জানার ফলে বাচ্চাদের নানান রোগ বালায় আক্রমণ করছে। তাহলে চলুন গরমে বাচ্চার যত্ন এবং অতিরিক্ত তাপমাত্রায় বাচ্চার হিট স্টোকের ঝুকি কমাতে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই ।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় অতিরিক্ত গরমে বাচ্চার যত্নের ঘাটতি হয় গ্রামের মানুষদের ক্ষেত্রে। কেননা তারা বাচ্চার সঠিক যত্ন সম্পর্কে একেবারেই বেখেয়াল। যেখানে সেখানে খেলে বেড়ায় দেখার তেমন কেউ নেই বাবা-মা কাজে ব্যস্ত থাকে এমনকি ময়লার মধ্যে খেলতে গিয়ে নানান ধরনের আবর্জনা মুখে দিয়ে সেগুলো খেয়ে ফেলে। ফলে বাচ্চার নানান সমস্যা দেখা দেয়। এমনকি গরমের সময় বাচ্চার অতিরিক্ত গরমের কারণে হিট স্ট্রোকের আশঙ্কা থাকে অনেক বেশি।

কিন্তু এই তাপমাত্রা প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বেশিরভাগ গ্রাম্য এলাকায় থাকে না বললেই চলে। কিন্তু শহরে এই সমস্যাটা তেমন নেই কেননা শহরে যারা থাকে তাদের প্রত্যেকের বাসায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসি থাকে। তাই বাচ্চার গরমে সমস্যা হয় না কিন্তু যাদের বাসায় এসি নেই তাদের কথাটা একবার চিন্তা করে দেখুন। তাই আজ আমরা জানবো কিভাবে অতিরিক্ত গরম প্রতিরোধ করে বাচ্চাকে সঠিক যত্নে রাখা যায়। তাহলে চলুন আর দেরি না করে আমরা মূল আলোচনায় চলে যাই।

অতিরিক্ত তাপমাত্রায় বাচ্চার শারিরিক সমস্যা 

অতিরিক্ত গরমের কারণে বাচ্চাদের বেশিরভাগ সময়েই আক্রান্ত হচ্ছে জ্বরে, অন্যান্য সময়ের তুলনায় এই সময়ের জ্বরের ভিন্নতা রয়েছে। সাধারণত শিশুরা যখন একদিন অথবা দুই দিনের জ্বর নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যায় তখন ডাক্তার ওষুধ দিলে সেটা স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসে তবে এই তাপমাত্রায় যে জোরগুলো বাচ্চার হচ্ছে সেগুলো একেবারেই আলাদা। এই জ্বরের চিকিৎসা দেওয়ার পরে বাচ্চার জ্বর হয় বেড়ে যাচ্ছে নয়তো কমছে না ।
এবং জ্বরের সাথে সাথে বাচ্চাদের আরও নানান সমস্যা দেখা দিচ্ছে যেমন ডায়রিয়া বমি কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছে এবং কাশি ও দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে ওষুধ দেওয়ার পরেও কোনোভাবেই কাশী ১০ থেকে ২০ দিনের কমে কমছে না এমন আরো নানান সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তীব্র গরমের কারণে পানি শুন্যতায় আক্রান্ত হতে পারে এছাড়া হিট স্ট্রোকের আক্রান্ত হতে পারে শিশুরা যা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে একটি শিশুর জন্য।
এ ব্যাপারে শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন অন্যান্য বছরের থেকে চলতি বছরে গরমের তাপমাত্রা অনেক তীব্র। অতিরিক্ত গরমে বড়দের সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চাদেরও বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতায় আক্রান্ত হচ্ছে যে কারণে হাসপাতালে আসা শিশু রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে প্রায় প্রতিদিনই দ্বিগুণ হারে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন এই গরমের সময় আমাদের কি পরিমান সতর্ক হয়ে থাকতে হবে এবং বাচ্চার সঠিক যত্ন সম্পর্কে জানতে হবে। এতক্ষণ আমরা গরমে বাচ্চার কি কি সমস্যা হয় এগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম এবার তীব্র গরমের শিশুর যত্ন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

অতিরিক্ত গরমে শিশুর যত্ন ও করণীয় 

অতিরিক্ত গরমে বড়রাই কাহিল হয়ে যাচ্ছে। সেখানে একজন শিশু তো কিছুই না। তার পক্ষে গরম সার্ভাইব করা একেবারেই অসম্ভব। সেক্ষেত্রে বাবা মাকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে  বাচ্চার প্রতি । একটু অবহেলাতেই হতে পারে একটি দুর্ঘটনা। ডাক্তার নিশাদ জাহান শিশু বিশেষজ্ঞ তিনি বলেন অতিরিক্ত গরমে বাচ্চারা যেন অসুস্থ না হয়ে পড়ে সেই দিকে বাবা-মার বা অভিভাবকদের বিশেষ পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে। এ সময় শিশুদের কিছু বাড়তি যত্ন নিতে হবে এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।  যেমনঃ
১। অতিরিক্ত গরমের শিশুরা যেন বাহিরে না যায়। রোদে খেলাধুলা না করে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ঘরে বসে ছায়ায় খেলতে দিবেন সব সময় ঠান্ডা জায়গায় রাখার চেষ্টা করবেন।
২। গরমে শিশুকে বেশি মোটা কাপড় পরিধান করাবেন না খুবই পাতলা এবং সুতির কাপড় পরিধান করান। অনেকেই বাচ্চার সুন্দর্য বাড়াতে অনেক ধরনের পোশাক পরিধান করিয়ে থাকেন সেই দিক থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা বাচ্চার সুরক্ষার দিকে আগে নজর দিতে হবে।
৩। শিশু যে রুমে থাকে সেই রুম যদি অতিরিক্ত গরম হয় বা রোমের টেম্পারেচার যদি ৩১ থেকে ৩২ ডিগ্রির বেশি হয়ে থাকে বা ৩৫ থেকে ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি হয় তবে অবশ্যই সেই রুমে বাচ্চাকে রাখা যাবে না। তবে কিছু নিয়ম ফলো করতে হবে যেমন রুম ঘন ঘন ঠান্ডা পানি দিয়ে মুছতে হবে, রুমের জানালা দরজা বন্ধ রাখতে হবে যেন বাহিরের তাপ ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে, এবং রুমে ঠান্ডা পানি বালতিতে ভরে রেখে দিতে হবে এর ফলে রুম ঠান্ডা হবে। এমনকি ভিজা কাপড় চোপড় মেলে দিয়ে রাখতে পারেন এর ফলে রুম টেম্পারেচার কম হবে।
৪। বাচ্চা যদি বেশিরভাগ সময় ঘরেরে মধ্যে থাকে তবে অবশ্যই বাচ্চা ঘেমে যাচ্ছে কিনা সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যদি গরমে ঘেমে যায় তবে বার বার ঘাম মুছে দিতে হবে , খেয়াল রাখতে হবে ঘাম যেন বাবুর শরিরে বসে না যায়। কেননা ঘাম শিশুর শিরিরে বসে গেলে জ্বর বা কাশি হতে পারে।
৫। শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমান পানি পান করাতে হবে। এবং পানীয় যুক্ত বিভিন্ন ধরনের ফলের রস জুস করে বাচ্চাকে খাওয়াতে হবে। এবং তরল জাতীয় খাবার বেশি বেশি দিতে হবে যেন কোনোভাবেই শিশুর দেহে ড্রিহাইড্রেশন অর্থাৎ পানিশূন্যতা না হয় এই দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
৬। শিশুর খাবারের ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। অতিরিক্ত গরমে খাবার দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় এমন ক্ষেত্রে বন্ধ হয়ে যাওয়া অনেকক্ষণ বাইরে পড়ে থাকা এবং বাসি খাবার শিশুকে দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। এমন খাবার বাচ্চাকে খাওয়ালে সহজেই শিশুর ডায়রিয়া বমি পেট ব্যথা এবং আমাশয় হতে পারে। এছাড়াও অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার বা ভাজাপোড়া শিশুকে খাওয়াবেন না পুষ্টি সমৃদ্ধ এবং সহজে হজম হয় এমন খাবার বাচ্চাকে দিন।
৭। শিশুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। অতিরিক্ত গরমে বাচ্চা যদি ঘন ঘন ঘেমে যায় তবে দিনে একাধিকবার গোসল করানো যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে গোসলের পানি যেন অতিরিক্ত বা ঠান্ডা প্রকৃতির না হয়। অবশ্যই স্বাভাবিক নরমাল পানি দ্বারা গোসল করাবেন।
৮। শিশুর ত্বক অত্যান্ত নরম এবং কমলিয় হয়। এজন্য খুব সহজেই বাচ্চার সানবার্ন হতে পারে তাই রৌদ্রে গেলে অবশ্যই বাচ্চার সুরক্ষা নিশ্চিত করে তারপরে যেতে হবে। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় শিশুকে একেবারে খোলা শরীরে রোদের তাপমাত্রায় নিয়ে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন, যদি যেতেই হয় তবে অবশ্যই ছাতা অথবা কাপড় দিয়ে শিশুকে ঢেকে তারপর বাহিরে বের হবেন ভালো এবং ছায়াযুক্ত স্থান ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। তবে সবথেকে ভালো সিদ্ধান্ত হলো রোদের মধ্যে বাহিরে বের না হওয়া।
৯। গরমে শিশুর ত্বকের বাড়তি যত্ন নিতে অবশ্যই বিশেষ নজর দিতে হবে। অতিরিক্ত গরমে ঘামের কারণে শরীরের লোমকূপ বন্ধ হয়ে র‍্যাশ দেখা দেয় ঘামাচি এবং ফুসকুড়িও হতে পারে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই শিশুকে বেশিরভাগ সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং পরিষ্কার নিয়মিত ধোয়া কাপড় পরিধান করাতে হবে।
১০। গরম থেকে শিশুকে রক্ষা করার জন্য যদি এসি ব্যবহার করেন তবে অবশ্যই টেম্পারেচারের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আপনার শারীরিক গরমের দিকে খেয়াল না করে বাচ্চার দিকে খেয়াল করুন তার টেম্পারেচার কত হওয়া উচিত এটা অনুভব করুন। তবে বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ রায় বলে থাকেন এসি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাচ্চার সুরক্ষায় ২৫ থেকে ২৮ ডিগ্রি টেম্পারেচারে এসি চালানো উচিত এর নিচে নামালে ঠান্ডায় বাচ্চার সমস্যা হতে পারে।
অতিরিক্ত গরমে বাচ্চার যত্ন নিয়ে দশটি টপিক আলোচনা করেছি। অবশ্যই এই নিয়মগুলো ফলো করে আপনার বাচ্চাকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করুন।

অভিভাবকের সচেতনতা ও করণীয়

  • আপনার শিশু ৬ মাসের কম বয়সী হলে বুকের দুধ খাওয়ান। শিশু ৬ মাসের কম বয়সী হলে বুকের দুধের পাশাপাশি বাড়তি পানি ও তরল খাবার খাওয়াতে হবে। শিশুর পাতলা পায়খানা হলে স্যালাইন খাওয়াবেন। টেস্টি স্যালাইন নয় বরং ওরস্যালাইন খাওয়ান।
  • অনেক শিশু পানিশূণ্যতা বোঝে না। তবে অস্থির হয়। পানি খেতে চায় না। বরং জুস খেতে চায়। ওদের বাড়িতে সহজপাচ্য ও পুষ্টিকর ফলের শরবত বানিয়ে দিন। তবে চিনি দেবেন না।
  • বাড়িতে এসি থাকলে কক্ষ তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রিতে রাখুন। শিশু একেবারে না ঘামলে ভেজা টাওয়েল দিয়ে শরীর মুছে দিন। তারপর আবার শুকনো কাপড় গায়ে দিয়ে দিন।
  • দাবদাহজনিত খিচুনি, নিস্তেজ বা অচেতন অবস্থা (হিট স্ট্রোক) দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যান।
  • গরমে শিশুদের ঢিলেঢালা ও সুতি কাপড়ের পোশাক পরান।
  • বাচ্চাদের গরমে বাইরে বেশিক্ষণ খেলতে দিবেন না। এমন একটি সময়ে তাদের বেরুতে দিন যখন রোদ খাড়াভাবে গায়ে ঝলক দিচ্ছে না।
  • শিশুর চুল গরমে ছোট রাখুন। এ সময় ঘাম হয় বেশি এবং বড় চুল হলে তা শুকাতে দেরি হয়। এসব কারণে সর্দিগম্যি হয় অনেক।
  • আপনার শিশু যেন পরিমিত পানি পান করতে পারে। ওদের নাগালের কাছেই পানি রাখুন।
  • বাচ্চাদের শরীরে প্রচুর ঘাম দেখা দিলে দ্রুত অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা জায়গায় নিয়ে কাপড় ঢিলে করে দিন।
  • শিশুর খাবার নির্বাচনে বাড়তি মনোযোগ রাখতে হবে। সহজপাচ্য ও পুষ্টিকর খাবার বাছাই করুন। গরণে এমনিতেও বাচ্চারা খেতে চায় না। তাই এমন খাবার রান্না করুন যা ওরা পছন্দ করে কিন্তু পুষ্টিকর।
  • গরমে যেন শিশুর পর্যাপ্ত ঘুম হয় সেদিকে নজর রাখা জরুরি।
  • নিয়মিত বেবি শ্যাম্পু  দিয়ে গোসল করাবেন।
  • গরমে অবশ্যই শিশুর ঘাম মুছে দেবেন। ওদের জামা যেন ভিজে না থাকে সেদিকেও আলাদা নজর দিতে হবে।

গরমে শিশুর যত্ন এর শেষ কথা 

প্রিয় বন্ধুগণ এতক্ষণ যাবৎ আপনারা গরমে শিশুর যত্ন সম্পর্কে এবং অতিরিক্ত তাপমাত্রায় শিশুর হিট স্ট্রোক কমাতে করনীয় সম্পর্কে জনেছেন । এই আর্টিকেলটি পরে যদি আপনার উপকার হয়ে থাকে তবে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। এবং তথ্যমূলক নিত্য নতুন পোস্ট পেতে নিয়মিত আমাদের পেজটি ভিজিট করুন কেননা আমরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন আর্টিকেল এই পেজে প্রকাশ করে থাকি। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ

Leave a Comment