আপনি কি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগছেন ? কোনো খাবারি খেতে পারছেন না ? যা খাচ্ছেন তাতেই পেটে গ্যাস হয়ে যাচ্ছে ? তাহলে আজকের এই আর্টিকেল টি আপনার জন্য ! তাহলে চলুন যেনে নেওয়া যাক গ্যাস্টিক থেকে চিরতররে মুক্তির ঘরোয়া উপায়ের বিস্তারিত।
আমাদের সমাজে বেশিরভাগ মানুষেরই গ্যাসের সমস্যা, এর প্রধান কারণ হলো অনিয়মিত খাবার গ্রহন। নিয়মিত সময়ে খাবার গ্রহন করলে অনেকটাই গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কিন্তু সেটাই আমাদের হয় না কেননা আমরা নানান কাজে বাহিরে থাকি বাহিরে ধুলা বালি মেশানো খবার খেয়েই আমরা সময় টাকে পার করে দিচ্ছি এর ফলে কি হচ্ছে ? আমাদের পাকস্থলি খাদ্যের সাথে ব্যাক্টেরিয়া থাকার কারনে সঠিকভাবে সেটাকে হজম না করতে পারার কারণে পেটে গ্যাসের সৃষ্টি হচ্ছে।
এই সমস্যা থেকে বাঁচতে কোলোনকে সুস্থ রাখার বিকল্প নেই। আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো কোলোন। খাবার হজম, পুষ্টি শোষণ, মল তৈরি সহ আরও জরুরি কিছু কাজ করে শরীরের এই অংশ। আমাদের খাদ্যাভ্যাসের ভুলের কারণে এই অঙ্গে জমা হয় আবর্জনা। আর সেখান থেকে দেখা দেয় গ্যাস্ট্রিক সহ একাধিক সমস্যা। তাই কোলন পরিষ্কার রাখতে হবে। তাহলে বুঝতে পারছেন কি ভাবে গ্যাসের সমস্যাগুলো আমাদের ক্ষতির কারণ হচ্ছে। তাহলে চলুন গ্যাস্ট্রিক থেকে বেঁচে থাকার ঘরোয়া উপায় গুলো জেনে নিই।
গ্যাস্ট্রিক থেকে বাঁচতে পানির প্রয়োজনীয়তা
প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ লিটার পানি পান করতে হবে যদি আপনি কোলন পরিষ্কার রাখতে চান। এতে মলের সঙ্গে শরীরে জমা ময়লা বের হয়ে যাবে। পানির পাশাপাশি ওরস্যালাইন ও ডাবের পানিও পান করতে পারেন। এতে উপকার পাবেন। তবে কিডনি বা হার্টের অসুখ থাকলে বেশি পানি পান করবেন না। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে পানি পান করুন।
গ্যাস নির্মূলে রেজিস্টেন্স স্টার্চ
ডাল, কলা, আলু জাতীয় খাবারে আছে পর্যাপ্ত রেজিস্টেন্স স্টার্চ। আর এই উপাদান পেট ভালো রাখতে কাজ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, এ ধরনের খাবার নিয়মিত খেলে অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। তাই প্রতিদিনের তালিকায় কলা, আলু, ডাল জাতীয় খাবার রাখুন। তবে ডায়াবেটিস থাকলে এ জাতীয় খাবার কম খাওয়াই ভালো।
উপকারী পানীয়র তালিকা করলে হার্বাল টি- এর নাম থাকবে উপরের দিকেই। এ জাতীয় সব চা-ই উপকারী। এই পানীয় অন্ত্র পরিষ্কার রাখতে বেশ কার্যকরী। তাই নিয়মিত এই চা খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতে গ্যাস্ট্রিক, বদ হজম, অ্যাসিডিটির মতো সমস্যা দূর হবে।
পেটের গ্যাস দূর করতে হাই ফাইবার যুক্ত খাবার খান
ফাইবার যুক্ত খাবার নিয়মিত খেলে মিলবে একাধিক উপকার। ডায়াবেটিস, প্রেশার, কোলেস্টেরল সহ বিভিন্ন ক্রনিক রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত ফাইবার যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। পেটের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও অত্যন্ত কার্যকরী এ ধরনের খাবার। ফাইবার যুক্ত খাবার নিয়মিত খেলে অন্ত্রের ময়লা পরিষ্কার হয়ে যাবে। তাই শাক, সবজি, ফলের মতো ফাইবার যুক্ত খাবার নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করুন।
গ্যাস থেকে মুক্তি পেতে ফলের রসের উপকারিতা
কোলোনের ময়লা দূর করতে চাইলে ফলের রস খেতে হবে নিয়মিত। গবেষণায় দেখা গেছে, বিভিন্ন ধরনের ফলের রস খেলে কোলোনে জমে থাকা ময়লা বের যায়। এটি খাবার হজমেও সাহায্য করে। তাই পেটের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নিয়মিত ফলের রস খান। তবে বাইরে থেকে কেনা জুস নয়, বাড়িতে তৈরি ফলের রস খেলে উপকার পাবেন।
গ্যাস্ট্রিক দূর করতে আদা
আদাতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান আছে যা গ্যাস্ট্রিক সমস্যায় জ্বালাপোড়া হলে তা রোধ করতে সাহায্য করে। আদা খেলে বমি সমস্যা, বদ হজম, গ্যাস হওয়া কমে যায়।পেট ফাঁপা ও পেটে গ্যাস হলে আদা কুচি করে লবণ দিয়ে খান, দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্যাসের সমস্যা ভালো হবে। আদার রসের সাথে মধু মিশিয়েও খেতে পারেন। দুপুরে ও রাতে খাওয়ার আগে এটি খেয়ে নিন।আদা কুচি করে পানি দিয়ে ফুটিয়ে নিন। ১০ মিনিট ডেকে রাখুন, এরপর সামান্য মধু মিশিয়ে চায়ের মতো বানিয়ে নিন। এই পানীয়টি দিনে ২/৩ বার পান করুন উপকারিতা পেতে।
ভাল ফলাফল পেতে নিয়মিত এটা গ্রহন করুন।
ঔষধ ছাড়া সম্পূর্ন ঘরোয়া উপায়ে গ্যাস নির্মূল করুন
আপনি জানেন কি সারাদেশে কি পরিমান মানুষ গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ গ্রহন করছে ? সারা দেশে প্রতিদিন হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ ঔষধ বিক্রি হয় শুধু মাত্র গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ যা অন্য কোনো রোগের ঔষধ এইভাবে বিক্রি হয় না। এর কারণ কি খাবারের অনিয়ম বা ভেজাল অথবা ভাজাপোড়া খাওয়ার কারনে।তাহলে আপনার গ্যাসের সমস্যা দূর করতে হলে আপনি কি শুধু ঔষধ খেয়েই গ্যাস নির্মূল করবেন? নাকি ঘরোয়া উপায়ে প্রাকৃতিক উপায়ে আপনার গ্যাস চিরতরে দূর করবেন ? অবশ্যই আপনি অবশ্যই দেখতে গিয়ে প্রাকৃতিক এবং ঘরোয়া উপায়ে গ্যাস দূর করার উপায় টাকেই বেছে নিবেন তাই না? তাহলে চলুন ঘরোয়া উপায়ে কিভাবে গ্যাস চিরতরে নির্মূল করা যায় এই বিষয়ে আলোচনা করা যাক।
শসা: শসা পেট ঠাণ্ডা রাখতে অনেক বেশি কার্যকর। এতে রয়েছে ফ্লেভানয়েড ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা পেটে গ্যাসের উদ্রেক কমায়।
দই: দই আমাদের হজম শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। এতে করে দ্রুত খাবার হজম হয়, ফলে পেটে গ্যাস হওয়ার প্রবণতা কমে আসে।
পেঁপে: পেঁপেতে রয়েছে পাপায়া নামের এনজাইম যা হজমশক্তি বাড়ায়। নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার অভ্যাস করলেও গ্যাসের সমস্যা কমে।
কলা ও কমলা: কলা ও কমলা পাকস্থলির অতিরিক্ত সোডিয়াম দূর করতে সহায়তা করে। ফলে গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও কলার দ্রবীভূত হতে সক্ষম ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ক্ষমতা রাখে। সারাদিনে অন্তত দুটি কলা খান। পেট পরিষ্কার রাখতে কলার জুড়ি মেলা ভার।
আদা: আদা সব চাইতে কার্যকরী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানসমৃদ্ধ খাবার। পেট ফাঁপা ও পেটে গ্যাস হলে আদা কুচি করে লবণ দিয়ে খান, দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্যাসের সমস্যা সমাধান হবে।
লবঙ্গ: একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, লবঙ্গে উপস্থিত একাধিক উপকারি উপাদান শরীরে প্রবেশ করার সাথে সাথেই গ্যাসের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না। তাই এবার থেকে বেশি মাত্রায় খাবার খাওয়ার পর বুক জ্বালা ও ঢেঁকুর উঠলে দু-একটি লবঙ্গ খেয়ে ফেলতে ভুলবেন না যেন!
অ্যালোভেরা: অ্যালোভেরায় উপস্থিত নানাবিধ খনিজ একদিকে যেমন ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়, তেমনি হজম ক্ষমতার উন্নতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, অ্যালোভেরার উপাদান পেটে তৈরি হওয়া অ্যাসিডের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। ফলে অ্যাসিডিটির সমস্যা একেবারে নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
পুদিনা পাতার পানি: এক কাপ পানিতে ৫টি পুদিনা পাতা দিয়ে ফুটিয়ে খান। পেট ফাঁপা, বমিভাব দূরে রাখতে এর বিকল্প নেই।
রসুন: অ্যাসিডিটির সমস্যা কমাতে রসুনের কোনো বিকল্প হয় না বললেই চলে। এক্ষেত্রে এক কোয়া রসুন খেয়ে ফেললেই স্টমাকে অ্যাসিড ক্ষরণের মাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করে। ফলে গ্যাস সংক্রান্ত বিভিন্ন উপসর্গ ধীরে ধীরে কমে যেতে শুরু করে।
ডাবের পানি: ডাবের পানি খেলে হজম ক্ষমতা বাড়ে এবং সব খাবার সহজেই হজম হয়ে যায়। এছাড়া গ্যাসের সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায় নিয়মিত ডাবের পানি খেলে। তাই সম্ভব হলে প্রতিদিন ডাবের পানি খাওয়ার অভ্যাস করুন। তাহলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে।
এছাড়া ওজন কমানো, খাবার গ্রহণের সময়ের সঠিক ব্যবধান রাখা, খালি পেটে চা না খাওয়া ইত্যাদি বিষয়গুলো নিজের আয়ত্বে রাখতে পারলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে পারেন।
গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া খুব বেশি কঠিন কিছু নয়। শুধু একটু নজর রাখতে হবে নিজের খাওয়া-দাওয়ার প্রতি। উল্লেখিত খাবারগুলোর সঙ্গে আঁশ জাতীয় খাবার বেশি বেশি করে নিয়মিত খাওয়া শুরু করুন তাহলে দেখবেন আপনাকে আর গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগতে হবে না। কিনতে হবে না ওষুধ এবং সাশ্রয় হবে আপনার উপার্জিত অর্থ। আশা করি বুঝতে পেরেছেন গ্যাস নির্মূলে ঘরোয়া উপায় গুলো কতটা কার্যকরী।
লেখকের শেষ মন্তব্য
প্রিয় ভিজিটরস এতক্ষণ যাবৎ আপনারা গ্যাস থেকে মুক্তি পাওয়ার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছেন আপনি যদি একজন গ্যাসের রোগী হয়ে থাকেন তবে এই আর্টিকেলটি আপনার উপকারে আসবে । আপনি যদি পুরো আর্টিকেল পড়ে কিছু বুঝতে না পারেন তবে মনোযোগ সহকারে আবার পড়তে পারেন এবং আর্টিকেল অনুযায়ী নিয়ম মেপে ঘরোয়া উপায় গুলো ফলো করলে আপনার গ্যাস দূর করতে সক্ষম হবেন ইনশাআল্লাহ। এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন এবং আমাদের পেইজকে ফলো করবেন কেননা আমরা নিয়মিত নতুন নতুন তথ্যমূলক পোস্ট এই পেজে আপলোড করে থাকি। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।